সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) ক্যাম্পাসের ভেতরে দেখা মেলে এক প্রতিবন্ধী শিশুর। তার নাম তরিকুল ইসলাম শিহাব। বয়স নয় বছর। খুলনার সাচিবুনিয়ার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে সে। বছর তিনেক আগে দুর্ঘটনায় এক পা হারায় শিহাব। মাকে হারিয়েছে তিন বছর বয়সে।
এক পা আর ক্র্যাচে ভর করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে ডিম ও শশা বিক্রি করে শিহাব। এতেই দৈনিক দেড়শো থেকে দুইশো টাকার মতো আয় হয় তার। ক্র্যাচে ভর করে সারা ক্যাম্পাস ঘুরতে কষ্ট হয় দেখে একজন শিক্ষার্থী তাকে একটি ওজন মাপার যন্ত্র কিনে দিয়েছেন। এতে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে শিহাবের সংসার।
যে বয়সে মায়ের হাতে মাখানো ভাত খাওয়া কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে খেলায় মত্ত থাকার কথা সে বয়সে এক পায়ে ভর করেই ধরতে হয়েছে সংসারের হাল। চালাচ্ছে নিজের পড়াশোনার খরচও। পারিবারিক টানাপড়েনে শিহাবের তিন বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন তার মা। বাবাও বিয়ে করে অন্য জায়গায় সংসার পেতেছেন। সেই থেকেই শিহাবের পৃথিবীতে আপন বলতে শুধু তার নানিই আছেন।
শিহাব জানায়, মা মারা যাওয়ার পর নানির সঙ্গে খুলনার জিরোপয়েন্টের পার্শ্ববর্তী কৃষ্ণনগর এলাকায় থাকে সে। তিন বছর আগে অটো ভ্যানের চেনের মধ্যে পা চলে যায় তার। তখন এক পায়ের বড় রগটি কেটে যাওয়ার কারণে পুরো পা কেটে ফেলতে হয়।
শিহাবের নানি হোসনে আরা বলেন, এখন আমি কাজ করতে পারি না, তাই ও যা আয় করে তা দিয়েই চলছে সংসার। শিহাবের স্বপ্ন বড় হয়ে বড় চাকরি করবে। অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলেও স্বপ্ন পূরণে বড় প্রতিবন্ধকতা অভাব-অনটন। কোনো বিত্তবান ব্যক্তি পাশে দাঁড়ালে হয়তো পাল্টে যেতে পারে শিহাবের জীবনযাত্রা।