উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং কয়েক দিনের টানা বর্ষণে তিস্তা নদীর তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পাঁচ দিনে আড়াই শতাধিক ভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কয়েকটি গ্রামসহ শত শত একর আবাদি জমি।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের ভাঙনকবলিত লকিয়ারপাড়া, পাড়াসাদুয়া, মাদারীপাড়া, চর মাদারীপাড়া ও কারেন্ট বাজার এলাকায় নদীতীরবর্তী মানুষের চরম দুর্ভোগ দেখা গেছে। ঘর হারানো পরিবারগুলো খোলা জায়গায় অবস্থান করছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিস্তার তাণ্ডবে লকিয়ারপাড়ার ৩০, পাড়াসাদুয়ার ৫০, মাদারীপাড়ার ৫০ এবং চর মাদারীপাড়া ও কারেন্ট বাজার এলাকার ১২০টি বাড়ি বিলীন হয়েছে। নদীগর্ভে ভিটে হারিয়ে পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন তীরবর্তী আরও অনেক মানুষ। তাঁরা কোনো রকমে বাড়িঘর ও গাছপালাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। গত কয়েক দিনে এসব এলাকায় বাঁশঝাড়, কবরস্থান, বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছপালা, ভিটাসহ আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যেতে দেখা যায়।
স্থানীয় লোকজন জানান, গত পাঁচ দিন ধরে তিস্তা নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় নদীভাঙন। অনেকের ঘর নদীতে তলিয়ে গেলেও পরনের কাপড়টুকু ছাড়া অন্য কিছু সরাতে পারেননি। ভাঙনের আতঙ্কে অনেকে বাড়িঘর সরিয়ে নিয়ে খোলা জায়গায় অবস্থান করছেন।
পাড়াসাদুয়া এলাকার আতাউর রহমান বলেন, ‘গত পাঁচ দিন ধরে তিস্তা নদীতে ভাঙনের তাণ্ডব চলছে। এভাবে নদী ভাঙতে থাকলে আমরা কোথায় যাব, কী খাব?’
গোলাম হাবিব মহিলা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী কণা খাতুন ও কাশিম বাজার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী জেসমিন আক্তার জানায়, নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য তাদের বাড়ি ভেঙে অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে পরিবার। এ অবস্থায় তাদের লেখাপড়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে চিন্তিত তারা।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোস্তফা আলী জানান, তাঁর ওয়ার্ডসহ লকিয়ারপাড়া থেকে কারেন্ট বাজার পর্যন্ত এলাকায় পাঁচ দিনে ২৫০টি পরিবার ভিটাবাড়ি হারিয়ে খোলা জায়গায় বাস করছে। নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। আরও কত বাড়ি নদীতে যাবে তা নিয়ে তিনি চিন্তিত।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কাশিম বাজার ও পাড়াসাদুয়া এলাকা পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ সাপেক্ষে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করা হবে। ইতিমধ্যে কারেন্ট বাজার এলাকায় ১ কিলোমিটার এলাকার ভাঙন রোধে বালু ভর্তি জিও ব্যাগের বরাদ্দ এসেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ওই এলাকাগুলোর ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গণনা শেষে ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হবে।