কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকের সংকটে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। কর্তৃপক্ষ বলছে, ২৫০ শয্যার হাসপাতালে ৬৫ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও মাত্র ১৪ জন দিয়ে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন ভবন, ২৫০ শয্যার যাবতীয় সুবিধা ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই থাকলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসকসহ জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পরও এখনো আইসিইউ সুবিধা চালু করা সম্ভব হয়নি। সরকারি এ হাসপাতাল তো বটেই; জেলার বেসরকারি পর্যায়ের কোনো হাসপাতালেও আইসিইউ সুবিধা নেই।
হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ৫০ শয্যার কুড়িগ্রাম হাসপাতাল পরে ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়। ২০১০ সালে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ উদ্দেশ্যে ২০১৩ সালে এখানে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পরে ২০১৭ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে এটি ২৫০ শয্যার হাসপাতালের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা পেতে শুরু করে। প্রায় চার বছর ধরে মেডিসিন ও ডাইটসহ অন্যান্য সুবিধা পেলেও শুরু থেকেই চিকিৎসকসংকটে ধুঁকছে হাসপাতালটি। ফলে ২২ লক্ষাধিক জনসংখ্যার এ জেলায় মানুষ কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ২৫০ শয্যার হাসপাতালের জন্য বিভিন্ন পদে ৬৫ জন চিকিৎসকের চাহিদা পাঠানো হলেও তত্ত্বাবধায়ক ও আবাসিক চিকিৎসকসহ (আরএমও) এই হাসপাতালে চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ১৪ জন। তা ছাড়া ৬টি পদ থাকলেও কোনো ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার নেই। ২০টি পদের বিপরীতে বিভিন্ন বিভাগের কনসালট্যান্ট রয়েছে ৯ জন। চক্ষু, চর্ম ও যৌন, রেডিওলজি ও প্যাথলজি বিভাগে কোনো কনসালট্যান্ট নেই। ৮টি পদের বিপরীতে ইনডোর মেডিকেল অফিসার রয়েছেন ১ জন। আর মেডিকেল অফিসারের ১০টি পদের বিপরীতে রয়েছে মাত্র ৩ জন। নেই কোনো রেডিওলজিস্ট ও প্যাথলজিস্ট।
হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ৮০-৯০ জন রোগী ভর্তি হন। আর আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসেন অন্তত ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ রোগী। কিন্তু এত রোগীর জন্য প্রতিদিন চিকিৎসক থাকেন ৪-৬ জন। অর্থাৎ একজন চিকিৎসককে প্রতিদিন প্রায় দুই-আড়াই শ রোগী দেখতে হয়। ফলে চিকিৎসকেরা যেমন পর্যাপ্ত সময় নিয়ে রোগী দেখতে পারেন না, তেমনি রোগীরাও কাঙ্ক্ষিত সেবা পান না।
হাসপাতালের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আউটডোরে রোগীর চাপ সামলাতে অনেক সময় উপসহকারী মেডিকেল অফিসার (সেকমো) দিয়ে জরুরি বিভাগ ও আউটডোর চালানো হয়, যাঁদের অনেকেই সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত নন।
চিকিৎসকসংকটে স্বাস্থ্যসেবার দুরবস্থার কথা স্বীকার করে হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) পুলক কুমার সরকার বলেন, ‘এক কথায় আমরা হিমশিম খাচ্ছি। এত অল্পসংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে রোগীর চাপ শামাল দেওয়া মুশকিল।’
জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা দিয়েছি। তারা চিকিৎসকের শূন্যপদ পূরণের আশ্বাস দিয়েছে।’