Ajker Patrika
হোম > ছাপা সংস্করণ

চা-বাগানে ফাগুয়া উৎসব

মাহিদুল ইসলাম,কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) 

চা-বাগানে ফাগুয়া উৎসব

চা-বাগানের ছায়াবৃক্ষে দুলছে সবুজ কচি পাতা। কোকিল ডেকে চলেছে অবিরাম। প্রকৃতি ও মানুষের মনে লেগেছে ফাগুনের রং। মৌলভীবাজারের প্রতিটি চা-বাগান জেগে উঠেছে ফাগুয়া উৎসবে। সবুজ প্রান্তর হয়েছে রঙিন।

বসন্তের এই আয়োজনে ভাসছে কমলগঞ্জের আলীনগর চা-বাগান, শমসেরনগর, মাধবপুর, ফুলবাড়ী, পদ্মাছড়া, পাত্রখোলা চা-বাগান, শ্রীমঙ্গলের বাড়াউড়া, ফুলছড়া, সোনাছড়াসহ পুরো মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা-বাগান। এ উৎসবের দুই সপ্তাহ আগে থেকে কাঠিনাচের জন্য দল গঠনের জন্য মহড়া চলে। যাঁরা ভালো নাচতে পারেন, গাইতে পারেন, বাজাতে পারেন তাঁদের নিয়ে দল তৈরি করা হয়। একেকটি চা-বাগানে লাঠিনাচের জন্য দুই-তিনটি দল তৈরি হয়।

সেই কবে, ইতিহাসের কোন আদ্যিকালে ভারত উপমহাদেশে শুরু হয়েছিল বসন্ত উৎসব। রং মাখিয়ে ফাগুনকে আরও রঙিন করার সে ধারাবাহিকতা চলছে এখনো। চা-শ্রমিকদের বড় উৎসব ফাগুয়া। প্রতিবছর নিয়ম করে ফাল্গুনের দোলপূর্ণিমায় শুরু হয় এ উৎসব। চলে সপ্তাহব্যাপী। এবার এ উৎসব শুরু হয়েছে গত মঙ্গলবার, চলবে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত। উৎসবকে বর্ণিল করার জন্য চা ফাঁড়িগুলোতে বসেছে লাঠিখেলা আর গানের আসর। বাড়িতে বাড়িতে ঐতিহ্যের কাঠিনৃত্যের তাল। খোল-করতালের যুগলবন্দীতে দুলে উঠছে আবালবৃদ্ধবনিতা। চলছে একে অন্যকে রং মাখানোর অবিরাম চেষ্টা। সঙ্গে আছে নতুন পোশাকের ওম আর সাধ্যমতো স্বাদের আয়োজন। উদ্দেশ্য একটাই, এই বসন্তে অশুভ শক্তির বিনাশ হোক, আসুক জ্যোতির্ময় শুভ। রঙিন হয়ে উঠুক বসন্ত, আরও রঙিন হোক জীবন।

এই রঙের উৎসবের পেছনে জীবনের গল্পটা একেবারে অন্যরকম। এক ঐতিহাসিক শঠতায় বাঁধা চা-বাগানের ফাগুয়া উৎসব। উনিশ শতকের প্রায় সিকি ভাগ চলে যাওয়ার পর আসাম, কাছাড় ও সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় চা-বাগান তৈরির কাজ শুরু হয়। সেসব বাগানে শ্রমিক হিসেবে আনা হয় মধ্যভারতের দুর্ভিক্ষপীড়িত সাঁওতাল, মুন্ডা, কুলবিল, লোহার, কূর্মী, ভূমিজ প্রভৃতি জনগোষ্ঠী এবং বিহার, ওডিশা, মাদ্রাজ, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বাঁকুড়া প্রভৃতি অঞ্চলের গরিব চাষিকে। সে অঞ্চলগুলোতে প্রতিবছর ফাল্গুনের পূর্ণিমা তিথিতে হতো দোলযাত্রা, হোলি বা ফাগুয়া নামে বসন্ত উৎসব। নাম যাই হোক, উৎসবটি রঙের, প্রেমের, ভালোবাসার। চা-বাগানের সমৃদ্ধ জীবনের মিথ্যে গল্পে জন্মভূমির চিহ্ন মুছে গেলেও সেই সব মানুষের জীবনে থেকে যায় বসন্ত উৎসবের কোড। প্রতিবছর সেই কোড ভুলে না যাওয়ার মহড়া হয় প্রতিটি চা-বাগানের প্রতিটি ফাঁড়ির প্রতিটি পঞ্চায়েতে। এ যেন বিবর্ণ জীবন ঘিরে গড়ে ওঠা এক অদ্ভুত রঙিন আয়োজন!

এ কথারই যেন প্রতিধ্বনি শোনা গেল কাজল হাজরার কণ্ঠে। তিনি শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন চা-বাগানে তরুণদের নিয়ে কাজ করা ‘উৎসর্গ তরুণ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ক। কাজল হাজরা জানিয়েছেন, শেকড়হীন চা-শ্রমিকদের সংগ্রামী জীবনে প্রতিবছর ফাগুয়া উৎসব আনন্দের জোয়ার নিয়ে আসে।

কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাম ভজন কৈরী একই সঙ্গে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী উপদেষ্টা। তিনি জানিয়েছেন, চা-শ্রমিকেরা কে কোথায় থেকে এসেছিলেন সে স্মৃতি এখন সুদূর অতীতের ধূসর কাহিনি। এখন ফাগুয়া উৎসব চা-শ্রমিকদের ঐতিহ্যের অংশ। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে চা-শ্রমিকেরা আনন্দে মেতে ওঠেন।

ইতিহাস যাই হোক, বর্তমানের আনন্দটাই মূল। চা-বাগানগুলোর এই আনন্দ থাক বছরভরে।

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

৮ বছরে শিশুহত্যা হয়েছে ৪০০০

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ, তবে বাজারে পিছিয়ে

দেশে ব্যবসায় ঘুষ–দুর্নীতিসহ ১৭ রকমের বাধা

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ