ঘোষণা দিয়েই ভাড়া বাড়ায় নৌপরিবহনে আরও একধাপ হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বরিশাল-ঢাকা রুটে গতকাল মঙ্গলবার থেকে লঞ্চের ভাড়া বেড়েছে ৩০ শতাংশ। সেই অনুযায়ী ডেকের ভাড়া ১০০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫৭ টাকায়। একইভাবে কেবিনের ভাড়া বাড়ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
এর আগে একতলা লঞ্চে ঘোষণা ছাড়াই ৩০ টাকা করে ভাড়া বাড়ে। এতে যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এমন হলে নৌপথে যাত্রী সংকট আরও তীব্র হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। তবে মালিকদের দাবি, তাঁরা সহনীয় পর্যায়ে ভাড়া বাড়িয়েছেন।
ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আ. রহমান। বরিশাল সদর উপজেলার সুগন্ধিয়া এলাকার এ বাসিন্দা বলেন, হঠাৎ লঞ্চঘাটে এসে শোনেন ভাড়া বাড়ছে। এখন পরিবারের চারজনের জন্য ৪০০ টাকা বাড়তি গুনতে হবে।
ঢাকা-বরিশাল রুটের একাধিক লঞ্চের মাস্টার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এমনিতেই যাত্রী কম হয়। তার ওপর ভাড়া বাড়ায় এর প্রভাব কতটা পড়ে তা চিন্তার বিষয়।
লঞ্চ ব্যবসায়ী রিন্টু বলেন, করোনা ও পদ্মা সেতুর কারণে লঞ্চ সেক্টর চরম লোকসানে পড়ে। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় এখন তা মরার ওপর খাঁড়ার ঘা-এ পরিণত হয়েছে।
নৌ যাত্রী ঐক্য পরিষদের বরিশালের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ নিলু বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় লঞ্চে যাত্রী কমে যায়। এরপর লঞ্চ মালিকেরা ভাড়া কমিয়ে যাত্রী ধরে রাখার চেষ্টা করেন। ফলে লঞ্চ সেক্টর অনেকটা স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু আবার ১০০ থেকে ৩০০ টাকা ভাড়া বৃদ্ধি করায় চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ বরিশাল থেকে এসি বাসে ঢাকা রুটে ৫০ টাকা ভাড়া বেড়েছে। অথচ লঞ্চে বৃদ্ধি করা হলো ১০০ টাকার বেশি। যাত্রীরা কেন বেশি ভাড়া দিয়ে লঞ্চে যাবেন।
তিনি বলেন, এর ফলে যাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি লঞ্চ সেক্টরে সংকট আরও বাড়বে। তাঁরা এ বিষয়ে অচিরেই কর্মসূচি দেবেন।
লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির তুলনায় লঞ্চের ভাড়া সাড়ে ৪২ ভাগ বাড়ানো উচিত ছিল। কিন্তু বেড়েছে ৩০ ভাগ। সে অনুযায়ী ঢাকা-বরিশাল নৌপথে লঞ্চের ডেকের ভাড়া ৩৫২ টাকা থেকে ১০৫ টাকা বাড়িয়ে ৪৫৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী কেবিনের ভাড়া ডেকের ভাড়ার চার গুণ বেশি হবে। সে অনুযায়ী সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা, ডাবল কেবিন ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করা হচ্ছে। তাঁর দাবি, ভাড়া সমন্বয় করায় কেবিনের নির্ধারিত ভাড়া হওয়া উচিত ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং ৩ হাজার ৬০০ টাকা।
লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি শেখ আবুল হাশেম বলেন, এই ভাড়া বৃদ্ধির চাপ জনগণের মাথায় উঠবে। যাত্রীদের অনীহাও বাড়বে। ভাড়া বাড়লেও তো শ্রমিকদের বেতন বাড়ে না। অনেক লঞ্চের কর্মচারীরা দৈনিক মজুর হিসেবে কাজ করায় চাকরি আজ আছে কাল নাই।