যশোরের কেশবপুরের হরিহর নদ পাড়ের মধ্যকুল জেলে পাড়ার গৃহবধূ পারুল বিশ্বাস। টানা দুই বারের বন্যার কারণে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েন। বসতভিটা ছাড়া জমি না থাকায় হয়ে পড়েন দিশেহারা।
কৃষি অফিসের পরামর্শে বাড়ির পাশের হরিহর নদের বুকের সবুজ কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করে বিষমুক্ত সবজির আবাদ শুরু করেন। ভাসমান বেডে জৈব সারে উৎপাদিত সবজি এখন পারুল বিশ্বাসের মুখে হাসি ফিরিয়ে এনেছে।
তাঁর মতো জেলে পাড়ার আরও ৫০টি পরিবার ভাসমান বেডে সবজি ও মসলার আবাদ করে সংসারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করেও স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
উপজেলার মধ্যকুল গ্রামের রাজবংশী পাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে চলা হরিহর নদের পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, নদে তেমন নাব্যতা না থাকায় সবুজ কচুরিপানায় পরিপূর্ণ হয়ে আছে। নদের মধ্যকুল অংশের কচুরিপানাকে কাজে লাগিয়ে রাজবংশী পাড়ার জেলে সম্প্রদায়ের বসতভিটা ছাড়া জমি নেই এমন অনেক কৃষক-কৃষাণীরা তৈরি করেছেন ভাসমান বেড। নদের প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে তাঁরা আবাদ করেছেন, পেঁয়াজ, রসুন, লালশাক, পালং, সবুজ শাক, কচু, লতিরাজ, লাউ ও মিষ্টি পোল্লা। ভাসমান বেডে আবাদ করা এসব চাষ দেখতে নদের পাড়ে ভিড় করেন এলাকার মানুষ। এ ছাড়া ভাসমান বেডে জৈব সারে তৈরি সবজি ও মসলা এ আবাদ মধ্যকুলসহ অন্য এলাকার নারীরাও আগ্রহী হচ্ছেন।
গৃহবধূ পারুল বিশ্বাসকে ডোঙা নৌকায় বসে ভাসমান বেডে উৎপাদিত লাল শাক ও পালং শাক খেত পরিচর্যা করতে দেখা যায়। এ সময় তিনি বলেন, ‘বন্যা হওয়ায় সংসারে খুব অভাব দেখা দিয়েছিল। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অনাথ বন্ধু দাসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় ভাসমান বেডে সবজি আবাদ করে প্রায় ৩ হাজার টাকার লাল শাক ও পালং শাক বিক্রি করেছি।’
জেলেপাড়ার গৃহবধূ সুচিত্রা বিশ্বাস বলেন, ‘এবার হরিহর নদে পাঁচটি বেডে পেঁয়াজ, রসুন, লাল ও সবুজ শাক আবাদ করেছি।’
কৃষক নীল রতন বিশ্বাস বলেন, ‘ভাসমান বেডে সবজি চাষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলেছে। গতবার বেডে লাগানো লাউগাছ থেকে প্রায় ৩০০ লাউ বিক্রি করেছি।’
মধ্যকুল ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রহিম বলেন, ‘২০১৬-১৭ সালে বন্যার পর এ গ্রামের জেলেপাড়ার অনেকেই অসহায় এবং অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়েন। নদে কচুরিপানা থাকায় এখানকার জেলেরা মাছ শিকার করতে না পারায় বিপাকে পড়ে যান। কৃষি অফিসের মাধ্যমে জেলে পাড়ার মানুষদের ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে আবাদ করে এখন তাঁরা আগের চেয়ে ভালো আছেন।’
কেশবপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, ‘মধ্যকুল জেলে পাড়ার নারীরা হরিহর নদের বুকে ভাসমান বেডে বিষমুক্ত সবজি ও মসলার আবাদ করে সংসারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করেও স্বাবলম্বী হচ্ছেন।’