সম্পাদকীয়
সুবোধ ঘোষ একজন বাঙালি লেখক ও বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ছিলেন। বিহারের হাজারিবাগে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর আদি নিবাস ছিল বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বহর গ্রামে।
ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে হাজারিবাগ সেন্ট কলম্বাস কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু অভাব-অনটনে পড়াশোনা ছেড়ে জীবিকার প্রয়োজনে কাজে যুক্ত হয়ে পড়েন। কাজের প্রয়োজনে একসময় চলে আসেন কলকাতায়। এর পরই শুরু হয় কঠিন জীবনের মাটিতে পা রাখার লড়াই।
সেই সময়ে হেন কাজ নেই যে সুবোধ ঘোষ করেননি। কর্মজীবন শুরু করেন কলকাতায় বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে। এরপর সার্কাসের ক্লাউন, বোম্বাই পৌরসভার চতুর্থ শ্রেণির কাজ, চায়ের দোকান, বেকারির ব্যবসা, মালগুদামের স্টোর কিপার ইত্যাদি কাজে তিনি তাঁর প্রথম জীবনের অনেকটা সময় ব্যয় করেন।
আনন্দবাজার পত্রিকায় যোগ দেওয়ার আগে ছয় মাস তিনি এক প্রেসের প্রুফ রিডার ছিলেন। পরে আনন্দবাজারের সম্পাদকীয় বিভাগের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। এরপর এই পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক-লেখক হন। তাঁর লেখালেখির কালপর্ব ১৯৪০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত।
বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে একটু বেশি বয়সে যোগদান করেও নিজস্ব মেধা-মনন, চিন্তাচেতনা আর লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি তাঁর অসাধারণ রচনাসম্ভারের মাধ্যমে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হন; বিশেষ করে তাঁর ‘অযান্ত্রিক’ ও ‘ফসিল’ বাংলা সাহিত্যের যুগান্তকারী গল্প। অনামী চক্র নামে তরুণ সাহিত্যিকদের বৈঠকে বন্ধুদের অনুরোধে তিনি এ দুটি গল্প লেখেন।
শুধু গল্পকার হিসেবেই তিনি খ্যাতি পাননি, উপন্যাস রচনায়ও তিনি ঋদ্ধ ছিলেন। এর যথার্থ প্রমাণ হলো ‘তিলাঞ্জলি’ উপন্যাসটি। তাঁর একটি বিখ্যাত উপন্যাস ‘জতুগৃহ’। বাংলায় ‘জতুগৃহ’ নামে তপন সিংহ এবং হিন্দিতে ‘ইজাজাত’ নামে গুলজার নির্মাণ করেছিলেন এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র। আর ‘অযান্ত্রিক’ গল্প অবলম্বনে সিনেমা নির্মাণ করেন ঋত্বিক ঘটক।
এই মহান সাহিত্যিক ১৯৮০ সালের ১০ মার্চ মারা যান।