অর্চি হক, ঢাকা
পঞ্চগড়ের একটি গ্রামের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী তামান্না (ছদ্মনাম)। বাড়ির কাছের একটি মক্তবেও পড়তে যেত সে। প্রতিদিনের মতো গত ৯ জুলাই সকালে মক্তবে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় ১২ বছরের শিশুটি। পথে এক লোক তার মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। পরে কাঁদতে কাঁদতে শিশুটি বাড়িতে গিয়ে মাকে ঘটনা জানায়, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে ৩ মাস। পরিবারের সদস্যরা জানান, আতঙ্ক থেকে এখনো মুক্তি মেলেনি শিশুটির।
শুধু তামান্না নয়, বাংলাদেশে প্রতিদিন তিনটির বেশি কন্যাশিশু ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, উত্ত্যক্তকরণসহ নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৮ বছরের কম বয়সী ৯১৩ কন্যাশিশু। আর জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত প্রথম ৮ মাসে ধর্ষণের
শিকার হয়েছে ২২৪ কন্যাশিশু। একই সময়ে হত্যার শিকার হয়েছে ৮১ এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ১৩৩ কন্যাশিশু।
এমন প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ ১১ অক্টোবর পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘গার্লস ভিশন ফর দ্য ফিউচার’।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কন্যাশিশু নির্যাতনের যে সংখ্যা আমরা দেখি, বাস্তব পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়াবহ। কারণ, নির্যাতনের খুব কম ঘটনাই প্রকাশিত হয়।’
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, বদলে যাওয়া রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কন্যাশিশুদের হয়রানির ঘটনা বাড়ছে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) সেপ্টেম্বর মাসের মানবাধিকার মনিটরিং প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা গত মাসের তুলনায় অনেকাংশে বেড়েছে, যা উদ্বেগজনক। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে ২০৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়, যা আগস্টের তুলনায় ৭০টি বেশি।
এমএসএফ মনে করে, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা, তা দৃশ্যমান হচ্ছে না। নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ভূমিকা দেখা যায় না। ফলে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা ঘটছে, যা জাতীয় জীবনে অন্যতম প্রধান উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারী ও কন্যাশিশুরা কমজোর, তাদের আর্থিক শক্তি নেই, বিচার পাওয়ার ক্ষমতা নেই, এসব ধারণা থেকেই তাদের ওপর সহিংসতা চালানো হয়। আজ যে কন্যাশিশু, আগামী দিনে সে-ই নারী। কন্যাসন্তানের নিরাপদ ও সুন্দর ভবিষ্যতের জন্যই সম্পদ-সম্পত্তিতে তার সমান অধিকার প্রয়োজন।