জহুরুল ইসলাম জহির, হরিণাকুণ্ডু
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হরিশপুর গ্রামের সেতু খাতুন-রাশিদুল দম্পতি। দুটি কিডনি বিকল হয়ে মরতে বসেছিলেন রাশিদুল। তাঁকে একটি কিডনি দিয়ে ভালোবাসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন সেতু। এখন তাঁরা ভালো আছেন।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হরিশপুর গ্রামের রাশিদুল ইসলাম পাঁচ বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাতিভাঙ্গা গ্রামের সেতু খাতুনকে। এ দম্পতির তিন বছরের একটি ছেলে রয়েছে। রাশিদুল আনসারে চাকরি করতেন। অসুস্থ হওয়ার পর চাকরি হারান।
দেড় বছর আগের ঘটনা। রাশিদুল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হলে তাঁর কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে। পরে খুলনার একটি হাসপাতালে পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা তাঁর দুটি কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার কথা জানান। চিকিৎসকেরা দ্রুত রাশিদুলকে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। এতে তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
কিডনি কিনে প্রতিস্থাপন করতে প্রয়োজন ছিল কয়েক লাখ টাকা, যা রাশিদুলের পরিবারের পক্ষে জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু এগিয়ে আসেন তাঁর স্ত্রী। রাশিদুলের সঙ্গে সেতুর কিডনি ম্যাচ করে। গত বছরের ১২ নভেম্বর রাজধানীর শ্যামলীতে একটি হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। সেখানে সাত মাস চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরেন রাশিদুল। সম্প্রতি হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সাতব্রিজ বাজারে মুদি দোকান করেন তিনি।
রাশিদুল বলেন, ‘এখন ভালো আছি। তবে ভারী কাজ করতি পারছিনে। বসে থাকলি তো চলবে না। তাই একটা দোকান নিয়েচি। সারা দিন বসেও কাজ করতি পারিনে। একবেলা দোকানদারি করি। মাসে মাসে ঢাকা যাতি হয়। প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকার ওষুধ কিনতি হচ্চে। টাকা পয়সা নিয়েও সমস্যায় আছি। তারপরও আল্লাহ আমাদের ভালো রেখেচে।’
এক প্রশ্নের জবাবে রাশিদুল বলেন, ‘আমার মনে হয় লাইফ পার্টনার হিসেবে আমি সর্বোচ্চ মানুষটিকে পায়চি। আল্লাহর রহমতে তাকে আমি পাইছিলাম বলে এখনও বেঁচে আছি। ভালো আছি।’
সেতু খাতুন বলেন, ‘আমি আমার স্বামীকে ভালোবাসি। সে যে আমার পাশে আছে, এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া কইরেন।’
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হুসাইন বলেন, ভালোবাসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাশিদুল-সেতু দম্পতি। প্রকৃতপক্ষে তাঁদের এ ভালোবাসার উদাহরণ যুগের পর যুগ মানুষের মনে নাড়া দেবে। রাশিদুলকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।