রংপুর ও বেরোবি প্রতিনিধি
ফাতেমা বেগমের বয়স ৭০ বছর। ১৫ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা গেছেন। তাঁর কোনো সন্তান নেই। ভিক্ষাবৃত্তি না করে প্রতিবেশীর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ক্যাম্পাসে বিক্রি করেন শিঙাড়া, চপ, পিঁয়াজু। তবে এতে দিন ভালো চলে না। এ ছাড়া ছয় মাস ধরে বয়স্কভাতা পান না তিনি।
ফাতেমা রংপুর নগরীর মডার্ন শেখপাড়া এলাকায় জয়নাল হোসেনের স্ত্রী। রোববার সকালে বেরোবি ক্যাম্পাসে দেখা মেলে ফাতেমা বেগমের। চোখেমুখে হতাশার ছাপ। খালি ডালা আর লবণের বোতল নিয়ে হাতে হাঁটছিলেন ক্যাম্পাসের গলিতে। শেখ রাসেল মিডিয়া চত্বরে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
ফাতেমা জানান, তিনি যে টাকায় শিঙাড়া, চপ, পিঁয়াজুর ব্যবসা করতেন। ওই টাকা ছিল ধারের। প্রতিবেশীর কাছে ধার করা ৩০০ টাকায় তিনি লালবাগ থেকে খাবার কিনে ক্যাম্পাসে বিক্রি করে ৭০-৮০ টাকা আয় করতেন। প্রয়োজন পড়ায় ওই টাকা ফেরত নিয়েছেন প্রতিবেশী। তাই গতকাল মালামাল আনতে পারেননি। বিক্রিও করতে পারেননি। প্রতিদিনের অভ্যাস তাই খালি ডালা নিয়েই ক্যাম্পাসে হাঁটেন।
ফাতেমা বলেন, ‘বাবা, আমার কোনো সন্তান নেই। ১৫ বছর আগে স্বামী মারা গেছে। শরীরে তেমন শক্তিও নেই, তাই মানুষ কাজ দেয় না। মানুষের কাছে হাত পাততে লজ্জা করে। তাই বাধ্য হয়ে শিঙাড়া, চপ, পিঁয়াজু বেচি। এখন এই পথও বন্ধ। ছয় মাস ধরে বয়স্কভাতা পাই না। ওষুধ কেনার টাকা নাই। তরিতরকারি চালের যে দাম, কী করে খাব, কেমনে বাঁচব?’
বিরোবির কয়েক শিক্ষার্থী জানান, ফাতেমা বেগম ক্যাম্পাসে এক বছর ধরে শিঙাড়া, চপ, পিঁয়াজু বিক্রি করেন। যেসব শিক্ষার্থী ক্লাস-পরীক্ষার চাপে অনেক সময় খাবার না খেয়ে আসেন। তাঁদের ভরসা ফাতেমা। যারা তাঁকে চেনেন তাঁরা পিঁয়াজু খালা বলে ডাকেন।
সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান মিনার বলেন, ‘এ বৃদ্ধ নারীকে নিয়মিত দেখি আমাদের ক্যাম্পাসে পেঁয়াজু, শিঙাড়া, চপ বিক্রি করতে। তাঁকে দেখে আমার খুব কষ্ট হয়। তাঁর এ বয়সে থাকার কথা ছিল বাসায়। কিন্তু টাকার অভাবে তিনি এখন ব্যবসা করছে।’