মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নওগাঁর মান্দায় হু হু করে বাড়ছে আত্রাই নদের পানি। বেড়িবাঁধের পুরোনো তিনটি ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এতে শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার আতঙ্ক বিরাজ করছে নদের পারের মানুষের মধ্যে।
গতকাল রোববার নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার থেকে বাড়তে থাকে আত্রাইয়ের পানি। ২৪ ঘণ্টায় পানি ৭০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সামনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের পারনুরুল্লাবাদ গ্রামের ভাদু মকবুলের বাড়ির পূর্ব পাশে এবং বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চকরামপুর ও কয়লাবাড়ি এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও বাঁধের এসব ভাঙা জায়গা আর মেরামত করা হয়নি। নদীর পানি বাড়লে অনায়াসে এসব ভাঙন দিয়ে হু হু করে পানি ভেতরে ঢোকে। তলিয়ে যায় খেতের ফসল। পানিবন্দী হয়ে পড়েন পাঁচ শতাধিক পরিবার।
নদীপারের মানুষজন বলেন, বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই তাঁরা বন্যার আতঙ্কে থাকেন। এ সময় তাঁদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। দিনরাত পাহারা বসিয়ে রক্ষা করতে হয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ফসল ও বাড়িঘর রক্ষার জন্য স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করেন তাঁরা।
চকরামপুরের বাসিন্দা ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ভাঙা স্থানগুলো মেরামতের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে দফায় দফায় আবেদন দিয়েও কাজ হয়নি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ভাঙা স্থানগুলো খোলা অবস্থায় আছে। নদীর পানি বাড়লেই তা লোকালয়ে ঢুকে যায়। তলিয়ে যায় বেড়িবাঁধের ভেতরে থাকা বিভিন্ন ফসলের খেত। পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে পড়ে কয়েক হাজার মানুষ।
বনকুড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জব্বার বলেন, আত্রাই নদের ডান তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার করা হয়নি। সংস্কারের অভাবে বাঁধটি সংকুচিত হয়ে গেছে। এ অবস্থায় পানি বাড়তে শুরু করলে নদের পারের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাঁধ রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় তাঁদের।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান বলেন, কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে আত্রাই নদের পানি বাড়ছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ঝুঁকির মুখে পড়বে কয়েকটি বেড়িবাঁধসহ দুই তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণের মূল বাঁধ।
আরিফুজ্জামান আরও বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো মনিটরিংয়ের কাজ চলছে। বাঁধ রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত মালামাল মজুত রাখা হয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু বাক্কার সিদ্দিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, বন্যা মোকাবিলায় এরই মধ্যে সাত সদস্যের তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া জরুরি মুহূর্তের জন্য বস্তাসহ বিভিন্ন উপকরণ প্রস্তুত রাখার কাজ চলছে।