বৈধ কোনো কাগজ নেই, নেই পরিবেশ ছাড়পত্র। এরপরও অনেক দিন ধরে আবাসিক এলাকায় কয়েল উৎপাদন করা হয়। আগুন লাগার শঙ্কা থাকায় স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করলে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালায় ওই কয়েল কারখানায়। পরে এটি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। তাতেও কর্ণপাত করেনি কর্তৃপক্ষ। অবশেষে এই কয়েল কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে সত্যি হয়েছে এলাকাবাসীর শঙ্কা।
অবৈধ কয়েল কারখানাটি রংপুরের কাউনিয়ার উপজেলার হারাগাছ পৌরসভার গফুরটারী মধ্যপাড়া এলাকার মোস্তফা আল মাহমুদের।গতকাল সোমবার দুপুরে মোস্তফা আল মাহমুদের বেঙ্গল সুপার ও বেঙ্গল কিং কয়েল কারখানায় ওই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এই ঘটনায় কয়েলের বিষাক্ত ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে ভুগছেন এলাকার শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। এতে স্থানীয়দের মনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, মোস্তফা প্রভাবশালী হওয়ায় কারও কথা কর্ণপাত করেন না। তিনি নিয়মনীতি না মেনে আবাসিক এলাকায় কয়েল কারখানা স্থাপন করেছেন, যা এলাকাবাসীর জন্য ঝুঁকির। আজকের (সোমবার) অগ্নিকাণ্ড ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকার লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হতো। বিএসটিআই ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের লোকজন ১০ দিন আগে দুই দফায় তাঁর কারখানা বন্ধ করার জন্য বলে গেছেন। সরকারি লোকের কথা তিনি শোনেননি। এরপর এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল।
হারাগাছ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ গোলজার হোসেন বলেন, ‘গতকাল বেলা ১টা ১৩ মিনিটের দিকে কয়েল কারখানায় আগুন লাগার খবর আসে। কয়েক মিনিটের মধ্যে আমরা সেখানে পৌঁছাই। কারখানার আশপাশে পানির উৎস না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়। ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরের খানবাড়ি পুকুর থেকে পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।’
গোলজার আরও বলেন, ‘বেঙ্গল কয়েল কারখানার আশপাশে ঘনবসতি। প্রশস্ত রাস্তা নেই। তাই আমরা গাড়ি নিয়ে কারখানা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি। অনেকটা দূরে রেখে আগুন নেভানোর কাজ করতে হয়েছে। এতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে। এসব আবাসিক এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কয়েল কারখানা স্থাপন করা ঠিক নয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কয়েল কারখানার এক শ্রমিক বলেন, ‘অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছি। আমাদের ভেতরে রেখে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। যখন আগুন লাগে, তখন ধোঁয়া লেগে ভেতরে অন্ধকার হয়ে যায়। আমাদের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে কেউ এসে দরজা খুলে দেয়।’
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা তারিন বলেন, ওই কয়েল কারখানা আগেই অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।