মাছ জীবিত রাখতে বিক্রেতা আলাল হোসেন অনবরত হাত দিয়ে পানিতে ঢেউ দিচ্ছিলেন। গতকাল শুক্রবার, সকাল তখন সাড়ে ৯ টা। পবার পারিলা ইউনিয়নের কিষ্টগঞ্জ বাজারে আলালের মাছ দেখতে এসে কয়েকজনের ভোটের আলাপ জমে উঠেছে। একজন বললেন, ‘পারিলায় এবারও নৌকা ডুববে। প্রথম হবে ঘোড়া। ঘোড়ার পক্ষেই বেশির ভাগ নেতা-কর্মী কাজ করছেন।’
পারিলা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামীকাল রোববার। এখানে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী সাঈদ আলী মোরশেদ। তিনি ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। নৌকা ছেড়ে আওয়ামী লীগের এই ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করছেন দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী।
পারিলায় নৌকা পেয়েছেন ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ফাহিমা বেগম। গতবার নির্বাচনেও নৌকা পেয়ে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর কাছে হেরেছিলেন। এদিকে, সম্প্রতি ফাহিমার জামাতা পবার কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে কটূক্তি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে উত্তপ্ত রাজশাহী। এতে আরও বেকায়দায় পড়েছেন ফাহিমা।
পারিলায় এবার বিএনপির কোনো নেতা নির্বাচন করছেন না। তবে আওয়ামী লীগের আরও এক ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আছেন। তিনি বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল বারী ভুলু। তাঁর প্রতীক আনারস। এ ছাড়া ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনয়ন পেয়ে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন রাজু হোসেন।
পারিলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে নৌকার চেয়ে ঘোড়া প্রতীকেরই পোস্টার বেশি দেখা গেছে। হাট রামচন্দ্রপুর বাজারে রয়েছে নৌকার একটি নির্বাচনী কার্যালয়। বেলা ১১টার দিকে কয়েকজনকে নিয়ে সেখানে বসেই এজেন্ট ঠিক করার কাজ করছিলেন প্রার্থী ফাহিমা বেগম। তিনি স্বীকার করলেন তাঁর পাশে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকেরাও নেই। পাশে নেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাব আলীও। তাঁরা সবাই প্রকাশ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী মোরশেদের হয়ে কাজ করছেন।
ফাহিমা বেগম বলেন, ‘আমার জামাইয়ের অডিও রেকর্ড ভোটে কোনো প্রভাব ফেলেনি। সে কাটাখালীর রাজনীতি করে, আমি রাজনীতি করি পারিলার। আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করছি। আপদে-বিপদে মানুষের পাশে আছি, কিন্তু আমার পাশে নেই দলের নেতারা। ১ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় কার্যালয়েই বিদ্রোহী প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস করা হয়েছে। অথচ সেখানে নৌকার অফিস হওয়ার কথা।’
৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি পারিলা বাজারে। বেলা সাড়ে ১১টায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নৌকার একটি পোস্টারও নেই। কার্যালয়টির দেয়ালে ঘোড়া প্রতীকের পোস্টার লাগানো। পারিলা বাজারেই পাওয়া গেল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাব আলীকে। তিনি ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্টদের পূরণের জন্য ফরম দিচ্ছিলেন। ভোট কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে বললেন, ‘এলাকায় ঘুরেন। ঘুইরা ঘুইরা দ্যাখেন।’ এরপর মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত সেখান থেকে চলে যান।
যোগাযোগ করা হলে ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাঈদ আলী মোরশেদ বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের হয়তো দলীয় প্রার্থী পছন্দ হয়নি। তাই তাঁরা আমার জন্য কাজ করছেন।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলীর দাবি, সবাই নৌকার বিপক্ষে নয়। তিনি বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থীসহ তাঁদের কিছু কিছু অনুসারীর নাম পেয়েছি, তাঁদের অব্যাহতি দিয়ে শোকজ করেছি। বিষয়টা জেলা আওয়ামী লীগকেও জানানো হয়েছে। জেলা কমিটি কেন্দ্রীয় কমিটিকে অবহিত করবে।’