দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক জীবন, ছিলেন নিজ দলের শীর্ষ নেতা এমন বেশ কয়েকজন প্রার্থীও এবার ভোটে হেরে গেছেন। পরাজিত হয়েছেন মন্ত্রী পদে রয়েছেন এমন ব্যক্তিও। সেই অর্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন না হওয়ার পরও কেন তাঁদের এই পরিণতি তা আগ্রহ জাগিয়েছে সাধারণ ভোটারসহ বিশ্লেষক-বিশেজ্ঞদের মনে।
দলীয় নেতা-কর্মী ও এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এবং ভোটের মাঠের হিসাব-নিকাশ করে কিছু কারণ এরই মধ্যে আলোচনায় এসেছে। যেমন তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, কটাক্ষ করে বক্তব্য, কমিটি গঠনে স্বেচ্ছাচারিতা, নির্বাচনী এলাকা থেকে বিচ্ছিন্নতা।
হেরে যাওয়া আলোচিত প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। কুষ্টিয়া-২ আসনে ১৫ বছর ধরে সংসদ সদস্য থাকলেও এলাকায় নিজ দলকে সংগঠিত করতে পারেননি। ফলে এবার ১৪ দলের শরিক হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়াই করেও ভরাডুবি ঘটেছে তাঁর। ইনুর ভরাডুবির জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাসদের দ্বন্দ্বকেই দায়ী করেছেন সাধারণ ভোটাররা।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনে জোটের প্রার্থী হয়েও হেরেছেন শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, পরপর তিনবার নৌকায় উঠে এমপি হলেও সেই দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেননি।
বর্তমান সরকারের মন্ত্রী পদে থেকেও হেরেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী; ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী দুইবারের এমপি এনামুর রহমান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী তিনবারের এমপি স্বপন ভট্টাচার্য।
নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরেছেন ঢাকা-১৯ (সাভার) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অতি সহজেই বিজয়ী হন তিনি। দুইবারের এই বেগহীন বিজয় তাঁকে (এনামুর রহমান) জনগণ থেকে অনেকটা দূরে সরিয়ে দেয় এবং নিজের জয়ের ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
মানিকগঞ্জ-২ আসনে (সিংগাইর-হরিরামপুর-সদরের ৩ ইউনিয়ন) আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। ভোটার ও এলাকাবাসী জানান, মমতাজের পরাজয়ের নেপথ্যে পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতি, তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, কমিটি গঠনে স্বেচ্ছাচারিতা।
যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য পরাজিত হয়েছেন জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি ইয়াকুব আলীর কাছে। স্থানীয়রা বলছেন, স্বপন ভট্টাচার্য প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পরে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি-অনিয়ম এবং দলের নিবেদিত নেতাদের ওপর নিপীড়নের কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ তাঁর সঙ্গে ছিল না।
টানা তৃতীয়বার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে পরাজিত হয়েছেন ফরিদপুর-৩ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ।
হবিগঞ্জ-৪ আসনে প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী হেরেছেন দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিছিন্ন থাকায়। ভোটারদের অভিযোগ গত ১০ বছরে এলাকায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি।
রাজনীতিতে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমশের মুবিন চৌধুরী সিলেট-৬ আসনে জামানত হারিয়েছেন। ভোটাররা জানান, দীর্ঘদিন তিনি এলাকা ছাড়া ছিলেন। তাঁর সঙ্গে মানুষের কোনো সুসম্পর্ক নেই।
পিরোজপুর-২ আসনে জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান মহাজোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পরাজিত হয়েছেন। তাঁর পরাজয়ের কারণ হিসেবে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকাকে দায়ী করা হচ্ছে। জেপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাহিবুল হোসেন মাহিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নৌকার বিরোধিতা করে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে পরাজিত করেছেন।’