বিজ্ঞানপ্রযুক্তিতে মুসলিম বিশ্বের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ‘মিউজিয়াম অব দ্য ফিউচার’। মধ্যপ্রাচ্যের সর্বাধুনিক শহর দুবাইয়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই জাদুঘর ইতিমধ্যে বিশ্বের ‘সুন্দরতম জাদুঘরের’ খেতাব পেয়েছে। উন্নয়ন-উদ্ভাবনে ঠাসা অর্ধশতক পরের পৃথিবী কেমন হবে, তা-ই ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির মাধ্যমে দর্শকের সামনে উন্মোচন করে এই জীবন্ত জাদুঘর। সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহারে ভবিষ্যতের আলোর দুনিয়া গড়ে তোলার দৃপ্ত প্রত্যয়ে চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি জাদুঘরটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে।
স্থাপত্যশৈলী
জাদুঘরের ভবনটি স্থাপত্য প্রকৌশলের নতুন বিস্ময়। আমিরাতের বিখ্যাত ‘কিল্লা ডিজাইন’-এর নকশায় এটি নির্মাণ করেছে যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত ‘ব্যুরো হ্যাপল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্সি’। ৩০ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত সাততলাবিশিষ্ট জাদুঘরটি ৭৭ মিটার উঁচু। ভবনটি উপবৃত্তাকার—মানুষের চোখের আকৃতির; যা মানবতার প্রতিনিধিত্ব করে, যা দিয়ে দেখা যাবে ভবিষ্যতের অপার বিস্ময়ের পৃথিবী। যে সবুজ ঢিবির ওপর উপবৃত্তটি নির্মিত হয়েছে, তা আগামীর সবুজ পৃথিবী বিনির্মাণের অনুপ্রেরণা জোগায়। আর বৃত্তের মাঝখানের খালি অংশ অজানা ভবিষ্যতের কথা বলে।
বৃত্তের গায়ে আমিরাতি ক্যালিগ্রাফার মাত্তার ইবনে লাহিজের করা ক্যালিগ্রাফিতে দুবাইয়ের শাসক মুহাম্মদ ইবনে রশিদ আল-মাকতুমের তিনটি বাণী আঁকা হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘আমরা শত বছর বাঁচব না, তবে আমাদের উদ্ভাবন শত শত বছর বেঁচে থাকবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘যারা ভবিষ্যৎকে ভাবতে পারবে, আত্মস্থ করতে পারবে এবং প্রয়োগ করতে পারবে, ভবিষ্যৎ তাদেরই হাতে। ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করবে না। ভবিষ্যৎকে আত্মস্থ ও বিনির্মাণের সময় এখনই।’ তৃতীয় বাণীতে তিনি বলেছেন, ‘জীবনোন্নয়ন, সভ্যতার উৎকর্ষ এবং মানবতার এগিয়ে যাওয়ার সূত্র একটিই—উদ্ভাবন।’
‘টুমরো-টুডে’ এই জাদুঘরের একটি আকর্ষণীয় প্রদর্শনী। উদ্ভাবকেরা কীভাবে অতীতের শত আবিষ্কারের মাধ্যমে আজকের পৃথিবী গড়ে তুলেছেন এবং বর্তমানে কীভাবে সেই আবিষ্কারের ধারা অব্যাহত রেখেছেন, তা-ই দেখানো হয় এখানে। আমাদের পরিবেশ, সংস্কৃতি, সমাজ ও রাজনীতির সংকট মূর্ত করে তোলা এবং সেই সংকট কীভাবে সমাধান করা হচ্ছে, তা দেখানোই এই প্রদর্শনীর লক্ষ্য।
জাদুঘরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিভাগ ‘জার্নি টু দ্য ফিউচার’। এই বিভাগে রয়েছে মহাকাশের থিমযুক্ত ‘ওএসএস হোপ এক্সপেরিয়েন্টাল ডিসপ্লে’। এখানে ২০৭১ সালে একটি বিশাল মহাকাশ স্টেশনের ভেতরের জীবন কেমন হতে পারে তা চিত্রিত হয়েছে। এই অংশে আরও রয়েছে আমাজন বনের অপূর্ব প্রকৃতির জীবন্ত প্রদর্শনী, যেখানে দর্শনার্থী সহস্র প্রজাতির সঙ্গে পরিচিত হবেন এবং জলবায়ু মোকাবিলার বৈশ্বিক কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। আরও দেখা যাবে ভবিষ্যৎ দুনিয়ার বৈপ্লবিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং অনুভবের নতুন দুনিয়া। আলো-পানির সঠিক ব্যবহার কীভাবে প্রকৃতির ছন্দ ফেরাবে, তা-ও স্পর্শ করে দেখা যাবে।
ছোটদের জন্য রয়েছে ‘ফিউচার হিরোজ’ বিভাগ। শিশু-কিশোরদের আগামীর পৃথিবীর যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে উৎসাহ দেয় এই প্রদর্শনী।
রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার, জলবায়ু মোকাবিলায় উদ্ভাবন এবং মানুষের দৈহিক-আত্মিক উন্নয়নই জাদুঘরের মূল প্রতিপাদ্য। ‘দুবাই ফিউচার ফাউন্ডেশন’ নির্মিত জাদুঘরটি আগামীর দুনিয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী মানুষের নতুন গন্তব্য, যা মুসলিম বিশ্বের উন্নয়নে অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবে।