রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
নীলফামারীর সৈয়দপুর মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নেই কোনো শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞও নেই। চালক না থাকায় ১০ বছর ধরে পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স। এক চিকিৎসা কর্মকর্তা অতিরিক্ত আরও দুটি পদ সামলাচ্ছেন।
এভাবেই শহরের পৌর পরিষদের সামনে অবস্থিত ১০ শয্যার হাসপাতালটিতে কোনোরকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে কার্যক্রম। এর ফলে সেবাপ্রত্যাশীদের বাধ্য হয়ে বাড়তি টাকা খরচ করে যেতে হচ্ছে বেসরকারি ক্লিনিকে।
গর্ভবতী মা ও শিশুদের চিকিৎসাসেবা দিতে ১৯৫৮ সালে প্রায় ৪০ শতক জমির ওপর কেন্দ্রটি গড়ে ওঠে। এরপর এখন পর্যন্ত এখানে বাড়েনি একটিও শয্যা। অথচ শহরের জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ।
কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে একজন পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র পরিদর্শিকা, নার্স ও সুইপারের পদ শূন্য আছে। আলট্রাসনোগ্রামের মেশিন থাকলেও তা ব্যবহারে সক্ষম চিকিৎসক নেই। এখানকার চিকিৎসা কর্মকর্তা একই সঙ্গে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও ক্লিনিক্যাল কন্টাক্ট সেশনের নীলফামারীর সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এখানে সপ্তাহে তিন দিন রোগী দেখেন। কেন্দ্র থেকে বিনা পয়সায় সন্তান প্রসব, জন্মনিয়ন্ত্রণসহ ১৬ ধরনের সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও অনেক কিছুই মেলে না বলে অভিযোগ রোগীদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কেন্দ্রের ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। সামনে ও ছাদে আগাছা জন্মেছে। চিকিৎসা কর্মকর্তার কক্ষ তালাবদ্ধ। অফিসের কর্মীরা গল্পগুজব করে সময় কাটাচ্ছেন।
এ সময় সালেহা পারভীন নামের এক গর্ভবতী নারী বলেন, ‘ডাক্তার দেখাতে এসে শুনি, উনি নীলফামারীতে অফিস করছেন। এভাবে পরপর দুই দিন এসে ফিরে যাচ্ছি।’
শহরের গোলাগাট এলাকার বিলকিস বানু বলেন, ‘আমার দুই মাসের মেয়ে তিন দিন ধরে অসুস্থ। এখানে এসে শুনি, কোনো শিশু ডাক্তার নেই।’
এ নিয়ে কথা হয় কেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানকার পাশাপাশি আরও দুটি পদে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে আমাকে। তাই প্রতিদিন রোগী দেখা সম্ভব হয় না।’
জাহিদুল ইসলাম জানান, ২০০১ সালে কেন্দ্রের শয্যাসংখ্যা ১০টি বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। জনবল, অবকাঠামো ও নানা ঘাটতি সত্ত্বেও যথাসম্ভব সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।