হার্ট অ্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এটি মারাত্মক হতে পারে, তবে কিছু সতর্কতা অনুসরণ করলে ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন
সুষম খাদ্য খাওয়া: কম চর্বিযুক্ত, উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার খান। সবজি, ফলমূল, বাদাম, মাছ এবং কম চর্বিযুক্ত দুধজাত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
পর্যাপ্ত ব্যায়াম: সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হাঁটা, সাইক্লিং বা সাঁতারের মতো মাঝারি ব্যায়াম করুন।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলুন। স্থূলতা হৃৎপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকর।
ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন: ধূমপান ও মদ্যপান ধমনি সংকুচিত করে এবং হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ হতে পারে।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরলের স্তর নিয়ন্ত্রণ করুন।
মানসিক চাপ কমানো এবং পর্যাপ্ত ঘুম
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: ধ্যান, যোগব্যায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন।
ঘুমের অভ্যাস উন্নত করুন: প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন।
হার্ট অ্যাটাক হলে করণীয়
যদি কারও হার্ট অ্যাটাক হয়, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
লক্ষণ
- বুকের মাঝখানে তীব্র ব্যথা বা চাপ অনুভূত হওয়া।
- বাঁ হাত, গলা, চোয়াল বা পিঠে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া।
- শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব বা মাথা ঘোরা।
- অতিরিক্ত ঘাম হওয়া।
জরুরি পদক্ষেপ
- ১১২ নম্বরে কল করে বা স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ডাকুন।
- আক্রান্ত ব্যক্তিকে বসিয়ে রাখুন এবং বিশ্রাম নিতে বলুন।
- অ্যাসপিরিন (৩০০ মি.গ্রা.) থাকলে চিবিয়ে খেতে দিন। এটি রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করতে সহায়তা করে।
- ব্যথা হলে নাইট্রোগ্লিসারিন (যদি চিকিৎসক অনুমোদন দিয়ে থাকেন) ব্যবহার করুন।
- জরুরি সিপিআর দিতে প্রস্তুত থাকুন।
জরুরি মুহূর্তে সিপিআর
সিপিআরের পুরো অর্থ হলো কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন।
এটি একটি জরুরি চিকিৎসা পদ্ধতি। যখন কোনো ব্যক্তির হৃদ্যন্ত্র হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় বা আক্রান্ত ব্যক্তি শ্বাস নিতে পারে না, তখন এটি প্রয়োগ করা হয়।
সিপিআর দেওয়ার সঠিক নিয়ম
- যদি আক্রান্ত ব্যক্তি শ্বাস না নেয় বা নড়াচড়া না করে, তাহলে সিপিআর দিতে হবে।
- অবস্থান নির্ধারণ: আক্রান্ত ব্যক্তিকে সমতল জায়গায় শুইয়ে দিন।
- বুক চেপে দিন: আপনার হাত দুটো একসঙ্গে রেখে আক্রান্ত ব্যক্তির বুকের মাঝখানে (স্টার্নামের ওপর) রাখুন। তারপর কনুই সোজা রেখে দুই হাত দিয়ে ৩০ বার চাপ দিন। প্রতিটি চাপ
- ২ ইঞ্চি বা ৫ সেন্টিমিটার গভীর হতে হবে এবং প্রতি সেকেন্ডে ১ থেকে ২ বার চাপ দিতে হবে।
- কৃত্রিম শ্বাস: মুখে মুখ লাগিয়ে দুবার শ্বাস দিন (যদি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন)। প্রতি ৩০ বার বুক চাপার পর দুবার শ্বাস দিন। যদি কৃত্রিম শ্বাস দিতে না পারেন, তাহলে শুধু বুক চাপার কাজ চালিয়ে যান। অ্যাম্বুলেন্স আসা পর্যন্ত সিপিআর চালিয়ে যান।
- আক্রান্ত ব্যক্তি সাড়া দিলে বা শ্বাস নিতে শুরু করলে তাকে পাশ ফিরে শুইয়ে দিন।
সতর্কতা
- সিপিআর দেওয়ার সময় পাশে থাকা সুস্থ ব্যক্তিকে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করুন।
- শিশুদের ক্ষেত্রে কম চাপ দিতে হয়। তাদের ক্ষেত্রে শুধু দুই আঙুল ব্যবহার করতে হবে।
- যদি নিশ্চিত না হন যে সিপিআর দিতে হবে কি না, তবু বুক চাপা শুরু করুন। কারণ, সিপিআর না দেওয়ার চেয়ে ভুল দেওয়া ভালো।
- এই নিয়মগুলো অনুসরণ করলে হার্ট অ্যাটাক থেকে একজন মানুষের বাঁচার সম্ভাবনা বাড়বে। সিপিআর জানলে আপনি কারও জীবন বাঁচাতে সহায়তা করা যায়।
ডা. অদিতি সরকার, রেসিডেন্ট চিকিৎসক