বন্যা বিশ্বের সাধারণ বিপর্যয়গুলোর অন্যতম। এ সময় দূষিত পানি এবং দীর্ঘস্থায়ী অস্বাস্থ্যকর অবস্থা থাকার কারণে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। সাধারণত ৪ ধরনের ত্বকের রোগ দেখা দিতে পারে এ সময়।
- প্রদাহজনিত ত্বকের রোগ
- ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ
- আঘাতজনিত চর্মরোগ
- পোকামাকড়ের কামড়ের প্রতিক্রিয়া
- প্রদাহজনিত ত্বকের রোগ
ডার্মাটাইটিস একটি সাধারণ নন-অ্যালার্জিক ত্বকের প্রদাহ। এটি দ্রুত ত্বকের ওপরের অংশের ক্ষতি করে। বন্যার সময় এর জ্বালা সাধারণত হাত ও পায়ে দেখা দেয়। এর লক্ষণগুলো সাধারণত ১ বা ২ দিনের মধ্যে প্রকাশ পায়।
- আক্রান্ত জায়গায় কোনো কিছু লাগলে তা সাবানপানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- পানিবন্দী থাকা জায়গায় গ্লাভস এবং প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরে কাজ করতে হবে।
- নিয়মিত এবং ঘন ঘন ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে, যাতে শুষ্কতা এবং চুলকানি না হয়। সুগন্ধিমুক্ত,হাইপোঅ্যালার্জেনিক ময়শ্চারাইজার গোসলের পর বা যখনই ত্বক শুষ্ক মনে হবে, তখনই ব্যবহার করতে হবে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণ
ছত্রাকের সংক্রমণ স্বাভাবিক অবস্থায় সহজে প্রকাশ পায় না। তবে স্থির পানি এবং আর্দ্র বাতাস ত্বককে ছত্রাক আক্রমণের উপযোগী করে তোলে। বন্যার পানি ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে; বিশেষ করে পায়ের অংশ যদি দূষিত পানিতে ডুবে থাকে। ছত্রাকজনিত ত্বকের সংক্রমণের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে চুলকানি, স্কেলিং বা পায়ের আঙুল বা আঙুলের মধ্যে ফ্ল্যাকিং। এগুলো ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
- ত্বক শুষ্ক রাখার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে আঙুল, পায়ের আঙুল, আন্ডারআর্ম, কুঁচকির মাঝখানে এবং অন্যান্য অংশ, যেখানে ঘাম সহজে আটকে যেতে পারে।
- চুলকানি বা ফ্ল্যাকি ত্বকের জন্য অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ, মলম ও ট্যাবলেট ব্যবহার করতে হবে। এর চিকিৎসার জন্য টপিক্যাল অ্যান্টিফাঙ্গাল ২ থেকে ৪ সপ্তাহের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ছত্রাক সংক্রমণ রোধে আর্দ্র জায়গা এড়িয়ে চলুন।
ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ
ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত ক্ষত প্রাথমিকভাবে লাল হয়ে ফুলে যায়। পরে তাতে দ্রুত পুঁজ হয় বা সেটি বড় ফোসকায় পরিণত হয়। এই সংক্রমণগুলোর চিকিৎসা সঠিকভাবে করা না হলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত বা হাড়ে সংক্রমণ করতে পারে।
চিকিৎসা
এ রোগে ক্ষত পরিষ্কার রাখা কার্যকর চিকিৎসা।
ক্ষত পরিষ্কার না থাকলে সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি তৈরি হয়।
আঘাতজনিত চর্মরোগ
বন্যার সময় পানিতে ডুবে থাকা বা ভেসে আসা ধারালো বস্তু, বৈদ্যুতিক তার বা বিষাক্ত প্রাণী থেকে আঘাতের ঝুঁকি থাকে। এ ধরনের বস্তু বা প্রাণীর মাধ্যমে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রাথমিকভাবে যে কাজগুলো করতে হবে—
- অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সাবান এবং অ্যালকোহলভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে ক্ষত স্পর্শ করার আগে এবং পরে হাত পরিষ্কার করুন। এটি সংক্রমণ এড়াতে সাহায্য করে।
- প্রয়োজনে পরিষ্কার ব্যান্ডেজ বা কাপড় দিয়ে মৃদু চাপ প্রয়োগ করে রক্তপাত বন্ধ করুন। রক্তপাত বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতটিকে উঁচু করে ধরে থাকুন।
- পরিষ্কার পানি দিয়ে ক্ষত পরিষ্কার করুন। তাতে অ্যান্টিসেপটিক ওয়াশ বা সঠিকভাবে মিশ্রিত অ্যান্টিসেপটিক তরল প্রয়োগ করুন।
- ক্ষতের চারপাশের ত্বক আলতো করে শুকিয়ে নিন।
- জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া দূর করার জন্য ক্ষতে অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম লাগান।
- ব্যান্ডেজ দিয়ে ক্ষত ঢেকে দিন। দিনে অন্তত একবার বা যখনই ব্যান্ডেজ ভেজা কিংবা নোংরা হয়ে যাবে, তখন বদলে ফেলতে হবে।
- যদি ক্ষত থেকে রক্তপাত বন্ধ না হয় এবং লাল ভাব বা ফোলাসহ সংক্রমণের লক্ষণ থেকে যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পোকামাকড়ের কামড়ের প্রতিক্রিয়া
বন্যার পর ডিম পাড়া এবং বৃষ্টিপাতের ফলে মশার ডিম ফোটার হার বেড়ে যায়। ফলে মশার সংখ্যা বাড়ে এবং মানুষ এর কামড়ের শিকার হয়। মশার কামড়ের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—কামড়ের কয়েক মিনিট পরে ফোলা এবং লালচে দাগ, ছোট ফোসকা, কালো দাগ;
যা ক্ষতের মতো দেখায়।
- মশার কামড় এড়ানোই আদর্শ প্রতিরোধ। লম্বা হাতা শার্ট ও প্যান্ট পরা এবং মশারি ও পোকামাকড়নিরোধক ব্যবহার করতে হবে।
- মশা কামড়ালে সাবান ও পানি দিয়ে জায়গাটি ধুয়ে ফেলতে হবে। ফোলা ভাব ও চুলকানি কমাতে ১০ মিনিটের জন্য বরফ লাগানো যেতে পারে।
সূত্র: ডিওসি টু আস