হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

মাত্র ১১ দিনে যেভাবে আসাদ সরকারের পতন, জানাল বিদ্রোহীরা

অনলাইন ডেস্ক

এইচটিএসের প্রধান কমান্ডার আবু হাসান আল-হামুই। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের ব্যাপক আক্রমণের মুখে মাত্র ১১ দিনের মধ্যে পতন হয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনের। এই আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। গোষ্ঠীটির সামরিক শাখার প্রধান কমান্ডার আবু হাসান আল-হামুই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে গতকাল শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কীভাবে তারা মাত্র ১১ দিনের মধ্যে আসাদ সরকারের পতন ঘটিয়েছে।

হামুই জানিয়েছেন, আসাদ সরকারের পতন ঘটাতে এইচটিএসের অভ্যন্তরে কার্যকরী পরিবর্তন আনা হয় এবং বিদ্রোহী বাহিনীর বৃহত্তর সংগঠনে ব্যাপক সমন্বয় সাধন করা হয়। তিনি জানান, ২০১৯ সালে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় বিদ্রোহী বাহিনীর বিরুদ্ধে আসাদের আক্রমণের পর এইচটিএস এক নতুন ‘সামরিক মতবাদ বা ডকট্রিন’ গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ দেয়।

বিদ্রোহী বাহিনীর এই শীর্ষ কমান্ডার বলেন, এর মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন ও বিশৃঙ্খল যোদ্ধাদের একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ সামরিক শক্তিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব হয়। তাদের এমনভাবে গড়ে তোলা হয় যাতে তারা সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের আক্রমণের পর সব বিপ্লবী গোষ্ঠীই বুঝতে পেরেছিল যে, মূল সমস্যাটি ছিল অভিন্ন নেতৃত্বের অনুপস্থিতি এবং যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের অভাব।’

আর এই জায়গাটি আমলে নিয়েই অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে ঐক্যের প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং যারা ঐক্যে আসতে অস্বীকার করেছিল—যেমন, আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট হুররাস আল-দিন—তাদের পরাজিত করা হয়।

হামুই ব্যাখ্যা করেন, আসাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পরবর্তী চ্যালেঞ্জ ছিল একটি নতুন সামরিক মতবাদ গড়ে তোলা করা। যোদ্ধাদের একটি মানসম্মত এবং সুশৃঙ্খল সামরিক ইউনিটে পুনর্গঠন করা হয় এবং একটি নির্দিষ্ট শৃঙ্খলাবদ্ধ কমান্ড কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা হয়। এইচটিএস তাদের নিজস্ব অস্ত্র, যানবাহন এবং গোলাবারুদ উৎপাদন শুরু করে। আসাদ সরকারের বিমানবাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব মোকাবিলার জন্য এইচটিএস একটি বিশেষ ড্রোন ইউনিট প্রতিষ্ঠা করে এবং উন্নত অ্যাটাক ড্রোন তৈরি করে সেগুলো ব্যবহারের ওপর মনোযোগ দেয়।

এইচটিএসের এই প্রচেষ্টা সফল প্রমাণিত হয়। শাহিন নামক অ্যাটাক ড্রোন আসাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযানে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হয়। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে বিদ্রোহী বাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ করার পর এইচটিএস দক্ষিণের বিদ্রোহীদের দিকেও মনোযোগ দেয়। এসব বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর অনেকেই ২০১৮ সালে আসাদ সরকার দক্ষিণ সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করার পর নিষ্ক্রিয় বা নির্বাসিত ছিল।

হামুই জানান, এইচটিএস একটি একক পরিচালনা কেন্দ্র তৈরি করে এবং সেখানে প্রায় ২৫টি গোষ্ঠীকে একত্রিত করা হয়। যাতে তারা আসাদের বিরুদ্ধে তাদের কার্যক্রম সমন্বয় করতে পারে। পরিকল্পনা ছিল উত্তর থেকে যোদ্ধারা আক্রমণ শুরু করবে, তারপরে দক্ষিণ দিকে যাবে এবং শেষে দামেস্ককে ঘিরে ফেলবে এবং এর আগে উত্তর ও দক্ষিণ থেকে বিদ্রোহী বাহিনীগুলো মাঝপথে একত্রিত হবে।

নভেম্বরের শেষ দিকে আঞ্চলিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হয় এবং অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলেও জানান হামুই। তিনি বলেন, এইচটিএস চেয়েছিল আরও যেসব দেশ আসাদ সরকারকে স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছিল—যেমন মে মাসে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত স্বীকৃতি দিয়েছিল—তা প্রতিহত করতে।

এইচটিএস বুঝতে পেরেছিল, আসাদের বিদেশি মিত্ররা তাদের নিজ নিজ সংঘাতে পুরোপুরি ব্যস্ত। রাশিয়া ইউক্রেনে গভীরভাবে জড়িত ছিল, ফলে তারা আসাদের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বিমান ইউনিট মোতায়েন করতে পারেনি। তেমনি, হিজবুল্লাহ ব্যাপক ইসরায়েলি অভিযানের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। লেবাননের এই গোষ্ঠীর যোদ্ধারা আসাদ সরকারের শাসন টিকিয়ে রাখতে মূল ভূমিকা পালন করেছিল।

ইরানও ইসরায়েলের সঙ্গে লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিল এবং আসাদকে সমর্থন করতে বাহিনী পাঠাতে অক্ষম ছিল। বিদ্রোহীরা ২৭ নভেম্বর তাদের অভিযান শুরু করে এবং সেদিনই ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ২৯ নভেম্বর থেকে তিন দিনের মধ্যে বিদ্রোহীরা আলেপ্পোর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। এর ফলে আসাদের হোমস এবং হামা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ দ্রুত ভেঙে পড়ে, দামেস্কের পথ খুলে যায়।

দক্ষিণের বিদ্রোহীরা ৬ ডিসেম্বর নির্ধারিত সময়ের আগেই তাদের অভিযান শুরু করে। এই বিদ্রোহগুলো দ্রুত আসাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় নিয়ন্ত্রণ ভেঙে দেয়। ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্রোহীরা দামেস্কে দখল করে এবং আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দ্রুত বিজয়ের পর ১০ ডিসেম্বর এইচটিএস নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি মোহাম্মদ আল-বাশিরকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন এবং তাঁকে একটি সরকার গঠনের দায়িত্ব দেন।

গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা

ইরানে সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে দুই বিচারপতিকে গুলি করে হত্যা

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ইসরায়েলের ব্যর্থতা মনে করেন হিজবুল্লাহ প্রধান

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে রোববার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে: কাতার

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে যা আছে

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় অনুমোদন, কার্যকর রোববার

ইসরায়েলের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন, মন্ত্রিসভার সম্মতির অপেক্ষা

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত, একদিন পিছিয়ে কার্যকর হতে পারে সোমবার থেকে

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিশ্চিত করল ইসরায়েল, অনুমোদনে মন্ত্রিসভার বৈঠক আজ

যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দিয়েও গাজায় ব্যাপক হামলা চালাল ইসরায়েল

সেকশন