অনলাইন ডেস্ক
ইরানে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণের হার দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির শীর্ষস্থানীয় একটি গবেষণা সংস্থা। এমন পরিস্থিতির জন্য গর্ভনিরোধে ইরানের কঠোর বাধা প্রদানের নীতিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই বিষয়ে ইরানের এইডস গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান লাদান আব্বাসিয়ান গত শনিবার তাসনিম বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, ‘যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে এইচআইভি সংক্রমণ বেড়েছে। পরীক্ষায় ২৪ হাজার ৭৬০ জনের মধ্যে ২৮ শতাংশই এই পথে ভাইরাসে আক্রান্ত।’
লাদান জানান, ২০২৪ সালের মার্চ থেকে শুরু হওয়া ইরানি ক্যালেন্ডারের প্রথম ছয় মাসে এই হার ৬৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সংক্রমণের ধরনে এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে ইরান ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ইরানের নারীদের মধ্যেও এইচআইভি সংক্রমণের হার বেড়েছে। দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে ১৯ শতাংশ ছিলেন নারী। চলতি বছরের মার্চ থেকে আগস্টের মধ্যে নারীদের এইচআইভি আক্রান্তের হার ৩২ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এইচআইভি শনাক্ত হওয়া রোগীদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই ছিলেন ২০ থেকে ৪৫ বছর বয়সী। তাই ইরানের এই বয়সী মানুষদের মধ্যে সচেতনতা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রচেষ্টা বাড়ানো উচিত বলে মত দিয়েছেন লাদান আব্বাসিয়ান।
অতীতে ইরানে এইচআইভির সংক্রমণ সাধারণত মাদক সেবনকারী ব্যক্তিদের মাধ্যমেই হতো। সর্বশেষ গবেষণায় এভাবে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক কমে গেছে। গবেষকেরা দেখেছেন, দেশটিতে মাদক সেবনকারীদের দ্বারা এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার হার ৫৩ শতাংশে নেমে এসেছে। চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে ১০ শতাংশ আক্রান্তই ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রাগ নিয়েছিলেন।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, গর্ভনিরোধ পদ্ধতির ওপর ইরান সরকারের আরোপ করা বিধিনিষেধ এবং কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনা মূল্যে কনডম বিতরণ বন্ধ করার কারণেও এইচআইভি সংক্রমণের হার বাড়তে পারে। ২০২১ সালে দেশটির জাতীয় এইচআইভি/এইডস কমিটির সদস্য ও শাহিদ বেহেশতি মেডিকেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাসউদ মারদানি সরকারি ওই নীতিটির সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘জনসংখ্যা বাড়াতে গর্ভনিরোধ ব্যবহারে বাধা আরোপ করলে অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ এবং যৌনবাহী রোগের পাশাপাশি এইচআইভি সংক্রমণের ঢেউ সৃষ্টি হতে পারে।’
২০১৪ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ঘোষণা করেছিলেন, ইরানের জনসংখ্যা ২০৫০ সালের মধ্যে ১৫ কোটি হওয়া উচিত। তবে এই নির্দেশনার বাস্তবায়নে দেশটিতে ব্যর্থতা দেখা গেছে। অনেকেই এর জন্য দেশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। দেশটির জন্মহার ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে এবং শতাব্দীর শেষে ইরানের জনসংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসতে পারে বলেও পূর্বাভাস রয়েছে।
ইরানের নারী এবং তরুণদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার বৃদ্ধি সংক্রমণের পদ্ধতির পরিবর্তনের কারণে হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন গবেষকেরা।