গাজাবাসীর জীবনে যেন দুনিয়াতে থাকা অবস্থায়ই নরক হয়ে উঠেছে। হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ইসরায়েল ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়ায় অঞ্চলটি প্রায় প্রয়োজনীয় সব পণ্যেরই অভাব দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় রেড ক্রসের প্রেসিডেন্ট গতকাল শুক্রবার গাজার মানবিক পরিস্থিতিকে ‘নরকতুল্য’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি সতর্ক করেছেন, গাজায় রেডক্রসে ফিল্ড হাসপাতাল দুই সপ্তাহের মধ্যে রসদ সরবরাহের অভাবে পড়বে।
সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির সদর দপ্তরে প্রধান মিরজানা স্পোলজারিক বলেন, ‘আমরা এখন এমন এক পরিস্থিতিতে নিজেদের খুঁজে পাচ্ছি যেটিকে আমি নরকতুল্য বলে বর্ণনা করতে বাধ্য হচ্ছি...অনেক অংশে মানুষের পানি, বিদ্যুৎ, খাবারের অভাব রয়েছে।’
ইসরায়েল গত ২ মার্চ থেকে গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়ায় ফিলিস্তিনি এই ভূখণ্ডে নতুন কোনো মানবিক সহায়তা প্রবেশ করেনি। কারণ, প্রথম ধাপের পর যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ নিয়ে আলোচনা ভেস্তে গেছে। পরে ইসরায়েল ১৮ মার্চ সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতিতে ২৫ হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছিল এবং হামাস সেই সহায়তা তাদের যুদ্ধযন্ত্র পুনর্গঠনে ব্যবহার করেছে। তবে হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। স্পোলজারিক বলেছেন, সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। তিনি বলেন, ‘ছয় সপ্তাহ ধরে কিছুই আসেনি, তাই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমাদের হাসপাতাল চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ শেষ হয়ে যাবে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, অ্যান্টিবায়োটিক এবং রক্তের ব্যাগের সরবরাহ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। জেরুজালেম থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে জেনেভায় সাংবাদিকদের ডক্টর রিক পিপারকর্ন বলেন, এই ভূখণ্ডের ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে ২২টি কেবল ন্যূনতমভাবে কার্যকর রয়েছে।
রেড ক্রসের প্রেসিডেন্ট মানবিক কার্যক্রমের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। স্পোলজারিক বলেন, ‘জনগণের চলাচলের জন্য এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক, তবে আমাদের কাজ করার জন্যও এটি বিশেষভাবে বিপজ্জনক।’
মার্চ মাসে, ৮ ফিলিস্তিনি কর্মীসহ ১৫ জন জরুরি ও ত্রাণ কর্মীর মরদেহ দক্ষিণ গাজার একটি গণকবরে সমাহিত অবস্থায় পাওয়া গেছে। জাতিসংঘ ও রেড ক্রিসেন্ট ইসরায়েলি বাহিনীকে তাদের হত্যার জন্য অভিযুক্ত করেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সোমবার জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে ‘হুমকি হয়ে উঠতে পারে’ এমন আশঙ্কার কারণে ওই ব্যক্তিদের ওপর হামলা করা হয়েছিল। ইসরায়েল দাবি করেছে, ওই ১৫ জনের আশপাশে তারা নাকি ছয় হামাস সদস্যকে শনাক্ত করেছিল।
স্পোলজারিক হামাসের হাতে বন্দী বাকি জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজার গুরুতর মানবিক সমস্যা সমাধানের জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে, ইসরায়েল ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গাজায় আগ্রাসন শুরু করে। তখন থেকে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ভূখণ্ডের বেশির ভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।