সিরিয়ার ঐতিহাসিক উমাইয়া মসজিদে দেশ গঠনে যেসব দিকনির্দেশনা দিলেন আল-জোলানি

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ৪০
উমাইয়া মসজিদে আহমদ আল-শারা ওরফে আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। ছবি: এএফপি

সিরিয়ার রাজধানী দখলকারী প্রধান বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অপসারণের পর সিরিয়ার জনগণই এ দেশের বৈধ মালিক এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এক নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে।’

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গতকাল রোববার হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতৃত্বে দামেস্ক দখলের কয়েক ঘণ্টা পর রাজধানী দামেস্কের ঐতিহাসিক উমাইয়া মসজিদে এক বিজয় ভাষণ দেন জোলানি। এ সময় তিনি সিরীয়দের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক কথা বলেন।

গতকাল রোববার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সিরিয়ার জনগণ এক নাটকীয়ভাবে বদলে যাওয়া দেশে জেগে ওঠে। বজ্রগতির এক অভিযান পরিচালনা করে বাশার আল-আসাদের বিরোধী বাহিনী দামেস্কে প্রবেশ করে এবং ঘোষণা করে—‘স্বৈরাচার’ বাশার আল-আসাদের সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। রুশ সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সিরিয়া থেকে পালিয়ে বাশার আল-আসাদ রাশিয়ায় অবস্থান করছেন।

উমাইয়া মসজিদে দেওয়া ভাষণে জোলানি বলেন, ‘আসাদ সরকার নিজ দেশের হাজার হাজার নাগরিককে অন্যায়ভাবে এবং কোনো অপরাধ না করার কারণেও বন্দী করেছে। আমরা সিরিয়ার জনগণ এই দেশের বৈধ মালিক। আমরা লড়াই করেছি এবং আজ আমরা এই বিজয়ের পুরস্কার পেয়েছি।’

ইসলামি ইতিহাসে দামেস্কের উমাইয়া মসজিদ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামি ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছে, কিয়ামতের আগে ঈসা আ. দামেস্কের এই উমাইয়া মসজিদেই অবতরণ করবেন। সেই মসজিদে দেওয়া ভাষণে আল-জোলানি বা আহমেদ আল-শারা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কত মানুষ সারা বিশ্বে বাস্তুচ্যুত হয়েছে? কত মানুষ তাঁবুতে জীবন কাটিয়েছে? কতজন সমুদ্রে ডুবে মারা গেছে?’

আহমদ আল-শারা ওরফে আল-জোলানি বলেন, ‘আমার ভাইয়েরা, এই মহান বিজয়ের পর পুরো অঞ্চলে এক নতুন ইতিহাস লেখা হচ্ছে।’ একই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেন, নতুন সিরিয়া গড়তে সবাইকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, যা মুসলিম জাতির জন্য এক আলোকবর্তিকা হয়ে উঠবে। এ সময় তিনি সবাইকে এই বিজয়ের জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে প্রার্থনা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আপনাদের ব্যর্থ হতে দেবেন না। এই বিজয় সব সিরিয়ানের, তারা সবাই এই বিজয়ের অংশ।’

আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি হায়াত তাহরির আল-শাম গঠনের আগে আল-কায়েদার সিরিয়ান শাখা আল-নুসরা ফ্রন্টের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০১৬ সালের পর তিনি আল-কায়েদার সঙ্গ ঝেড়ে ফেলেন। তবে এইচটিএস এখনো যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং তুরস্কের কাছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত।

আল-জোলানি এবং এইচটিএস এই ধারণা পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। তারা ঐক্যের বার্তাকে গুরুত্ব দিয়েছে। বিষয়টি উমাইয়া মসজিদে দেওয়া তাঁর ভাষণেও প্রতিফলিত হয়েছে। লেবানন-সিরিয়া সীমান্ত থেকে আল-জাজিরার প্রতিনিধি জেইন বাসরাভি জানান, এইচটিএস নেতার বক্তব্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।

বাসরাভি বলেন, ‘তিনি (আল-জোলানি) এই ধারণায় জোর দিয়েছেন যে, প্রতিশোধ নেওয়া উচিত নয়...এবং সবাইকে নিয়ে একটি নতুন সিরিয়া গড়ার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। তিনি ইরানের সরকার এবং সিরিয়ায় তাদের ভূমিকার সমালোচনা করেন এবং উল্লেখ করেন যে, এখন আর ইরানের মতো বহিরাগত শক্তির দ্বারা প্রভাবিত সরকার থাকবে না।’

গতকাল রোববার দামেস্কে পৌঁছানোর পর আল-জোলানি সেজদায় প্রার্থনা করেন। পরে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পাঠ করা এক বিবৃতিতে আল-জোলানি বলেন, ‘আমরা আমাদের বিপ্লবের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি ...আমরা ২০১১ সালে যে পথে যাত্রা শুরু করেছিলাম, তা সম্পন্ন করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সিরিয়ার মহান জনগণের সব অধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই থামাব না। ভবিষ্যৎ আমাদের এবং আমরা বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, রোববারের ঝোড়ো বিদ্রোহী অগ্রযাত্রা ১৩ বছরের নির্মম যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছে, যা আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের শাসনেরও অবসান ঘটিয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের মার্চে। সে সময় লাখো মানুষ বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে একটি শান্তিপূর্ণ বিদ্রোহ শুরু করেন। সরকার বিদ্রোহ দমনে ব্যাপক বলপ্রয়োগের আশ্রয় নিলে এটি পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়, যা বিদেশি শক্তিদের টেনে আনে, কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটায় এবং লাখ লাখ মানুষকে শরণার্থী বানায়।

আরও পড়ুন: