প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পরপরই তাঁর দমননীতির প্রতীক হয়ে ওঠা সিরিয়ার সাইদনায়া কারাগারে ভিড় জমায় শত শত মানুষ। আসাদ সরকারের বিরোধিতা করার জন্য কুখ্যাত ওই সামরিক কারাগারে গত কয়েক দশক ধরে হাজার হাজার মানুষকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল।
সোমবার বিবিসি জানিয়েছে, বন্দী হওয়া স্বজনের খোঁজে কারাগারে ছুটে গিয়েছিলেন তুরস্কভিত্তিক সাহায্য সংস্থা বাহার-এর প্রধান নির্বাহী ডা. শরভান ইবেশও। একজন বন্ধুর বাবাকে খুঁজতে তিনি মধ্যরাতে সেখানে পৌঁছান। তাঁর বন্ধু বিশ্বাস করেন, তাঁর বাবা গত ১৩ বছর ধরে সাইদনায়া কারাগারে আটক রয়েছেন।
ডা. ইবেশ জানান, তিনি যখন পৌঁছান তখন কারাগারের ভেতরে ‘অরাজকতা’ বিরাজ করছিল। শত শত মানুষ তাদের প্রিয়জনদের খুঁজছিল। কিন্তু ফল ছিল হতাশাজনক। বন্ধুর বাবাকে শেষ পর্যন্ত খুঁজে পাননি তিনি।
বিবিসিকে ইবেশ বলেন, ‘আমরা তাকে খুঁজে পাইনি এবং কোনো তথ্যও পাইনি। আমার বন্ধু ভীষণ ভেঙে পড়েছে। ১৩ বছর ধরে তিনি তাঁর বাবাকে খুঁজে পাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তবে আমাদের বলা হয়েছে, অনেক বন্দীকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
ইবেশ জানান, কারাগার থেকে শত শত মানুষ বের হচ্ছিল। তাই ভেতরে প্রবেশ করা খুব কঠিন ছিল। অসংখ্য বন্দী এবং স্বজনদের ভিড়ের কারণে উদ্ধারকারীদের কাজে বিঘ্ন ঘটছিল।
সিরিয়ার সিভিল ডিফেন্স গ্রুপ হোয়াইট হেলমেটস কারাগারের ভেতরে বন্দীদের জন্য গোপন সেল বা গুপ্ত কুঠুরি খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত এমন কিছু পাওয়া যায়নি।
কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া বন্দী ও তাঁদের পরিবারের জন্য ২০ কিলোমিটার দূরের একটি মসজিদে পুনর্মিলনী কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। গতকাল রোববার ডা. ইবেশ সেখানে গিয়েছিলেন এবং সদ্য মুক্তি পাওয়া অনেকের বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থা লক্ষ্য করেন।
তিনি দেখেন, লোকজন সদ্য মুক্তি পাওয়া দুজন ব্যক্তিকে সাহায্য করার চেষ্টা করছে। বহু বছর ধরে বন্দী থাকায় তাঁরা পুরোপুরি দিশেহারা ছিল। এমনকি সময় কিংবা অঞ্চল সম্পর্কেও তারা কিছুই বলতে পারছিল না।
ইবেশ বলেন, ‘লোকজন তাদের জিজ্ঞেস করছিল, তোমার নাম কী? তোমার বয়স কত? কিন্তু তারা এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারছিল না।’
ইবেশ জানান, বন্দীদের চেহারা দেখে তাঁদের বয়স অনুমান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাঁরা পুরোপুরি জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে। শুধু ফাঁকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
আসাদের শাসনে লক্ষাধিক রাজনৈতিক বন্দীকে আটক করা হয়েছিল। তুরস্কভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশন অব ডিটেইনিজ অ্যান্ড দ্য মিসিং ইন সাইদনায়া প্রিজন (এডিএমএসপি) ওই কারাগারটিকে ‘মৃত্যু শিবির’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
২০১১ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধেও সরকারি বাহিনী হাজার হাজার মানুষকে বন্দী শিবিরে আটকে রেখেছিল। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এসব শিবিরে বন্দীদের ওপর নির্যাতন ছিল সাধারণ ঘটনা।