Ajker Patrika

সিরিয়ায় ইসরায়েলের বাড়াবাড়িতে ক্ষুব্ধ এরদোয়ান

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১: ৩১
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ছবি: আনাদোলু
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ছবি: আনাদোলু

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান প্রতিবেশী সিরিয়ায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা করেছেন। ইসরায়েল-তুরস্ক সিরিয়ার মাটিতে ক্রমবর্ধমান সংঘাত নিরসনের লক্ষ্যে আলোচনার কয়েক দিন পর এক কূটনৈতিক ফোরামে এরদোয়ান এ মন্তব্য করেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ তুরস্কের আন্তালিয়ায় অনুষ্ঠিত কূটনীতি ফোরামে আগতদের উদ্দেশে এরদোয়ান বলেন, ‘তুরস্ক সিরিয়াকে নতুন করে অস্থিতিশীলতার ঘূর্ণিতে পতিত হতে দেবে না।’ তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সিরিয়ার ‘৮ ডিসেম্বরের বিপ্লবকে দুর্বল করার চেষ্টা’ করার অভিযোগ তোলেন।

এরদোয়ান বলেন, ‘আমরা এই অঞ্চলের সব প্রভাবশালী খেলোয়াড়, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সিরিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার বিষয়ে ঘনিষ্ঠ আলোচনা ও অভিন্ন বোঝাপড়ায় রয়েছি।’ ফোরামে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা উপস্থিত ছিলেন। শারা সম্মেলনের ফাঁকে এরদোয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

তুর্কি প্রেসিডেন্টের দপ্তর জানিয়েছে, এরদোয়ান সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য আংকারার প্রচেষ্টা পুনর্ব্যক্ত করে শারাকে বলেছেন, তুরস্ক ‘সিরিয়ায় যারা আবারও বিশৃঙ্খলা ঘটাতে চায় তাদের সুযোগ না দেওয়াকে স্বাগত জানায়।’

সিরিয়ার সাবেক স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের উৎখাতের পর থেকে ইসরায়েল ও তুরস্কের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। এ মাসের শুরুতে ইসরায়েলি বাহিনী সিরিয়ার তিনটি সামরিক ঘাঁটিতে বিমান হামলার পর উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তুর্কি সামরিক দল হামা প্রদেশের প্রধান বিমানবন্দর এবং হোমসের টি-৪ ও পালমিরা বিমান ঘাঁটি পরিদর্শন করেছে। আংকারা ও দামেস্কের মধ্যে পরিকল্পিত যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তির অংশ হিসেবে সেখানে সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে রানওয়ে, হ্যাঙ্গার ও অবকাঠামো মূল্যায়ন করা হয়েছে।

আসাদ চার মাস আগে মস্কোয় পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ইসরায়েল সিরিয়ায় কয়েক শ বার দেশটির বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাসহ সামরিক সম্পদ ধ্বংস করেছে। আসাদের উৎখাত সিরিয়ায় তাঁর পরিবারের ৫০ বছরেরও বেশি স্বৈরশাসনের অবসান ঘটায়, সেই সঙ্গে এক দশকব্যাপী গৃহযুদ্ধেরও সমাপ্তি ঘটায়।

শারার নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা দামেস্কে ক্ষমতা দখলের পর আংকারা সিরিয়ার নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আবির্ভূত হয়। তুর্কি কর্মকর্তারা দামেস্কের সঙ্গে দ্রুত সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, একই সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছেন, যার ফলে তুর্কি বাহিনী সিরিয়ার আকাশসীমা ব্যবহার করতে এবং সেখানে ঘাঁটি স্থাপন করতে পারবে।

নিউইয়র্কের থিংক ট্যাংক সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালের বিশ্লেষক অ্যারন লুন্ড বলেন, ‘সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের দ্বিতীয়ার্ধে আসাদের রক্ষাকর্তা ছিল রাশিয়া। যদি তুরস্ক এসে সিরিয়ার আকাশসীমায় আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা স্থাপন বা যুদ্ধবিমান আনা শুরু করে, তবে ইসরায়েলের কর্মের স্বাধীনতা উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত হয়ে যাবে।’

লুন্ড আরও বলেন, ‘তুরস্কের জন্য এখন সমস্যা শুধু ইসরায়েলের সামরিক উপস্থিতিতে আপত্তি জানানো নয়, বরং এমন কিছু করা যা পরিকল্পিতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে সিরিয়ায় একটি কার্যকর সরকার গঠনে বাধা দিচ্ছে বা দুর্বল করছে। যেমন—ইসরায়েল নতুন শারা সরকারকে দামেস্কের দক্ষিণে বাহিনী মোতায়েন করতে দিচ্ছে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত