Ajker Patrika
হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

ইসরায়েলের ‘হৃৎপিণ্ড’ তেল আবিবে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

অনলাইন ডেস্ক    

ইসরায়েলের ‘হৃৎপিণ্ড’ তেল আবিবে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
তেল আবিবে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ক্ষতিগ্রস্ত স্থান পরিদর্শন করছেন উদ্ধারকর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের কার্যত রাজধানী তেল আবিবে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতি। আজ শনিবার ভোরে হুতি বাহিনী তেল আবিবজুড়ে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছে। হুতি বাহিনী এই হামলাকে ইসরায়েলের হৃৎপিণ্ডে হামলার সঙ্গে তুলনা করেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্টের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাবাহিনী (আইডিএফ) আজ শনিবার ভোরে তেল আবিবের জাফা এলাকায় সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার ঘটনা নিশ্চিত করেছে। মধ্য ইসরায়েল ও এর আশপাশের সমতল ভূমিতে স্থানীয় সময় শনিবার ভোর ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে রকেট সাইরেন বেজে ওঠে। সাধারণত সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পূর্বাভাস হিসেবে এই সাইরেন বেজে ওঠে। আইডিএফ জানিয়েছে, এই হামলা ইয়েমেন থেকে নিক্ষিপ্ত একটি ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে হয়েছে।

আইডিএফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হামলায় কয়েকজন সামান্য আঘাত পেয়েছেন এবং তাদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থল চিহ্নিত করে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি তেল আবিবের একটি আবাসিক এলাকায় আঘাত হানে।

এদিকে, তেল আবিবের দক্ষিণের বা’আল শেম তভ স্ট্রিটের একটি আবাসিক ভবনে সরাসরি আঘাতের ফলে সৃষ্ট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও দমকল বাহিনী কাজ করে। ইসরায়েলি স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান মাজেন দাউদ আদমের (এমডিএ) প্যারামেডিকেরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে আহতদের চিকিৎসা দেন।

অপরদিকে, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোতে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে ভিন্নমত দেখা গেছে। মাআরিভ পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, ভাঙা কাচের আঘাতে ১৪ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ ওই এলাকায় শ্র্যাপনেলের আঘাত পাওয়া কিছু মানুষকেও উদ্ধার করেছে। অপরদিকে, ওয়াল্লা পত্রিকা দাবি করেছে, আগুনে দুজন আহত হয়েছে, যার মধ্যে একজন নাবালক।

ইসরায়েল পুলিশ তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানিয়েছে, তেল আবিবের একটি এলাকায় শ্র্যাপনেলের আঘাতের বিষয়ে একাধিক খবর পাওয়া গেছে। তাদের ভাষ্যমতে, এই মুহূর্তে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানগুলো নিরাপদ করতে কাজ করছে।

হুতি বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে এ হামলার দায় স্বীকার করা হয়েছে। হুতি কর্মকর্তা হেজাম আল-আসাদ হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বেশ কিছু বিদ্রুপাত্মক পোস্ট করেন। তার মধ্যে কিছু হিব্রু ভাষায় লেখা, যা ইসরায়েলি জনগণকে সরাসরি উদ্দেশ্য করে।

এক হিব্রু পোস্টে হেজাম আল-আসাদ লেখেন, ‘সব ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ব্যর্থতা প্রমাণ করে যে, সন্ত্রাসী শত্রুর হৃৎপিণ্ড আর নিরাপদ নয়।’ অন্য এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘বিলিয়ন ডলার খরচ করে বানানো প্রতিরক্ষাব্যবস্থার আর কোনো উপযোগিতা নেই।’ আরবিতে শেয়ার করা আরেক পোস্টে আল-আসাদ লেখেন, ‘শত্রু তাদের সামরিক অবস্থান এবং উপনিবেশকারীদের মনোবল বজায় রাখতে গণমাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে। যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী মিসাইল পড়েছে, তারা সেই জায়গাগুলোকে (আমাদের) ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত এলাকা হিসেবে উপস্থাপন করছে।’

এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। দেশটির অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি, যেমন—আয়রন ডোম এবং ডেভিডস স্লিং সিস্টেম এই হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। হুতি বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এই ব্যর্থতা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার প্রমাণ।’

ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের ফলে তেল আবিবের বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেছেন, ‘আমাদের ভবনে আগুন লাগার শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে যায়। আতঙ্কে আমরা দৌড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিই। এ ধরনের ঘটনা আমাদের নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।’

এই হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। হুতি বিদ্রোহীরা ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে রকেট হামলা চালিয়ে তাদের সামরিক সক্ষমতার একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে। এ ঘটনা ইসরায়েলের নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি করবে।

এদিকে, হামলার পরপরই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জরুরি বৈঠক ডাকেন। তিনি বলেছেন, ‘দেশের নিরাপত্তার জন্য আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নেব। শত্রুরা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাকে চ্যালেঞ্জ জানালে তাদের কঠোর জবাব দেওয়া হবে।’ এই রকেট হামলার ঘটনা ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গাজায় রমজান: ধ্বংসস্তূপের মাঝে বিশ্বাসে অবিচল

গাজায় আরও ৫০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের, ইসরায়েলের সায়

তুরস্কে ৪০ বছর লড়াইয়ের পর পিকেকের অস্ত্র সমর্পণের ঘোষণা

সিরিয়ায় রাশিয়ার ঘাঁটি রাখতে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের তদবির

ইসরায়েলকে ৩ বিলিয়ন ডলারের বুলডোজার ও গোলাবারুদ দিল যুক্তরাষ্ট্র

গাজা নিয়ে চলচ্চিত্রে হামাস কর্মকর্তার ছেলে, প্রত্যাহার করে দুঃখপ্রকাশ বিবিসির

ইরাকের তেলের জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পুতিন

গাজায় ‘মানবাধিকারের প্রতি নজিরবিহীন অবজ্ঞা’ দেখিয়েছে ইসরায়েল: ভলকার তুর্ক

গাজায় এখনো নিখোঁজ ১৪ হাজারের বেশি, ৭ শতাধিক অজ্ঞাত পরিচয় মরদেহ উদ্ধার

চার ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহের বিনিময়ে ৬২০ ফিলিস্তিনির মুক্তি