গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার কথা ছিল স্থানীয় সময় আজ রোববার সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে বা বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টায়। হামাস যতক্ষণ প্রথম ধাপে যেসব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে তাদের তালিকা না দেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে না। এই অবস্থায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের তরফ থেকে এই তালিকা প্রসঙ্গে জানানো হয়েছে, তারা অবশ্যই জিম্মিদের তালিকা দেবে। তবে কারিগরি তথাপ্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে এই তালিকা দিতে বিলম্ব হচ্ছে।
নেতানিয়াহু এমন এক সময়ে যুদ্ধবিরতি বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেন, যখন যুদ্ধবিরতি শুরুর মাত্র এক ঘণ্টা বাকি ছিল। আজ রোববার সকালে নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) নির্দেশ দিয়েছেন, যে যুদ্ধবিরতি সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, তা তখনই শুরু হবে, যখন ইসরায়েল হামাসের কাছ থেকে যেসব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে, তার তালিকা পাবে। হামাস এটি সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এদিকে, হামাস গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি তাদের দৃঢ় অবস্থানের কথা নিশ্চিত করেছে। গোষ্ঠীটি বলেছে, প্রথম পর্যায়ে মুক্তির জন্য যেসব জিম্মির তালিকা প্রকাশে দেরি হয়েছে, তা ‘মূলত কারিগরি বা প্রযুক্তিগত সমস্যার’ কারণে।
এর আগে, কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে বলেন, ‘চুক্তির পক্ষগুলো এবং মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে সমন্বয়ের পর গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি রোববার (১৯ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে।’ গাজাবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সতর্ক থাকুন, সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং কেবল সরকারি সূত্র থেকে পাওয়া নির্দেশনার অপেক্ষা করুন।’
এদিকে, যুদ্ধবিরতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বন্দিবিনিময় চুক্তি নিয়ে আল-মায়াদিনকে এক বিশেষ সূত্র গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছে। গত শুক্রবার সূত্রটি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস যেকোনো নারী বা শিশু বন্দীকে মুক্তি দিলে, প্রত্যেক বন্দীর বিপরীতে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ৩০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। এর মধ্যে নারী ও শিশুরাও থাকবে। একইভাবে, ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সী কিংবা অসুস্থ বন্দীদের ক্ষেত্রে প্রতি বন্দীর বদলে ৩০ জন বয়স্ক বা অসুস্থ ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি পাবে।
এ ছাড়া একজন নারী ইসরায়েলি সেনাকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ৩০ জন ফিলিস্তিনি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দী এবং ১৫ বছরের কম সাজা বাকি থাকা আরও ২০ জন বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। চুক্তির প্রথম ধাপে ২০১১ সালের বিনিময় চুক্তিতে মুক্তি পাওয়া কিন্তু পরে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পুনরায় গ্রেপ্তার হওয়া ৪৭ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে।
তা ছাড়া, এই চুক্তির আওতায় মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দীদের আগের অভিযোগে পুনরায় গ্রেপ্তার করা যাবে না। তাদের বাকি সাজা ভোগ করতে হবে না এবং মুক্তির শর্ত হিসেবে কোনো নথিতে স্বাক্ষর করতে হবে না।
এদিকে, যুদ্ধবিরতির চুক্তি কার্যকরের কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, মুক্তি পেতে যাওয়া জিম্মিদের তালিকা এখনো প্রকাশ করেনি হামাস। এই কারণে চুক্তি কার্যকরে বিলম্ব হতে পারে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিবৃতির বরাতে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত জিম্মিদের তালিকা হাতে না আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই চুক্তির ব্যাপারে অগ্রসর হব না। ইসরায়েল কোনোভাবেই চুক্তি লঙ্ঘন সহ্য করবে না। আর এমন কিছু হলে তার সম্পূর্ণ দায় হামাসের।’
যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, মুক্তির অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে হামাসকে জিম্মিদের নামের তালিকা সরবরাহ করতে হবে। তবে এখনো হামাস এই তালিকা প্রকাশ করেনি। রোববার (১৯ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা পর্যন্ত জিম্মিদের মুক্তির সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।