হোম > বিশ্ব > পাকিস্তান

কী ঘটছে উত্তাল পাকিস্তানে, কত দিন চলবে

অনলাইন ডেস্ক

শিপিং কনটেইনার দিয়ে ব্যারিকেড দিলেও ইমরান খানের সমর্থকেরা সেই বাধা মানেননি। ছবি: দ্য ডনের সৌজন্যে

ব্যারিকেড ভেঙে রাজধানী ইসলামাবাদে প্রবেশ করেছে কারাবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের হাজারো সমর্থক। আজ মঙ্গলবার সকালেই রাজধানীর চারপাশে স্থাপিত ব্যারিকেড ভেঙে ইসলামাবাদে প্রবেশ করে তারা। এ সময় তারা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ ঠেকাতে পাকিস্তান সরকার সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা কার্যকর করেছে, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে এবং রাজধানীতে প্রবেশের প্রধান সড়কগুলোতে ব্যারিকেড স্থাপন করেছিল, যাতে বিক্ষোভকারীরা প্রবেশ করতে না পারে। এর আগে ইমরান খান তাঁর সমর্থকদের পার্লামেন্ট অভিমুখে মিছিল করার আহ্বান জানান।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি সাংবাদিকদের জানান, বিক্ষোভকারীরা ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে অবস্থান করতে পারে, তবে তারা শহরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।

এই বিক্ষোভ এমন সময় ঘটছে, যখন ইসলামাবাদে নিরাপত্তা ব্যাপক বাড়ানো হয়েছে। কারণ, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো গতকাল সোমবার তিন দিনের সফরে পাকিস্তান পৌঁছেছেন। এই সফরে তিনি শাহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

কী ঘটছে

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের পেশোয়ার থেকে ইমরান খানের সমর্থকদের একটি গাড়িবহর গত রোববার ‘লংমার্চের’ অংশ রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে রওনা দেয়। পেশোয়ার থেকে ইসলামাবাদের দূরত্ব প্রায় ১৮০ কিলোমিটার। এই গাড়িবহরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি এবং খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুর। এই প্রদেশে খানের দল ক্ষমতায়। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টের নিকটবর্তী বড় খোলা এলাকা ডি-চকে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ করার পরিকল্পনা করেছিল।

বিক্ষোভকারীরা গতকাল সোমবারই ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়। পথে তাদের ব্যাপক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তবে এই সময়ে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। তবে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে এবং সড়কগুলো শিপিং কনটেইনার দিয়ে অবরোধ করে অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, একটি পুলিশিচৌকিতে আগুন জ্বলছে এবং মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামাবাদের ঠিক বাইরে এবং পাঞ্জাব প্রদেশের অন্যান্য স্থানে পুলিশের ২২টি যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

খানের সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। ছবি: দ্য ডনের সৌজন্যে

এ ছাড়া পুলিশের সঙ্গে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির (পিটিআই) সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের চিকিৎসকেরা সিএনএনকে জানিয়েছেন, ‘পাঁচজন নিহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে চারজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং একজন বেসামরিক ব্যক্তি।’ বিভিন্ন সূত্র সিএনএনকে জানায়, বিক্ষোভ চলাকালে একটি গাড়ি তাদের ধাক্কা দেয়।

এদিকে, আজ মঙ্গলবার সকালে বিক্ষোভকারীরা ইসলামাবাদ শহরের প্রবেশপথগুলোতে স্থাপিত ব্যারিকেড ভেঙে প্রবেশ করে এবং একটি বড় মিছিল শহরের জিরো পয়েন্ট অতিক্রম করতে দেখা যায়। পরে বহরটি ইসলামাবাদের বাণিজ্যিক এলাকা ‘ব্লু এরিয়া’ হয়ে ডি-চকের দিকে অগ্রসর হয়। ইসলামাবাদের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো; যেমন পার্লামেন্ট, সুপ্রিম কোর্ট এবং সচিবালয়ের বাইরে সৈন্যদের অবস্থান করতে দেখা যায়।

বিক্ষোভ চলবে কত দিন

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তারপরও পুলিশ বিক্ষোভকারীদের প্রতি ‘সংযম’ দেখাচ্ছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি বিক্ষোভকারীরা সীমা অতিক্রম করে, তাহলে নিরাপত্তা বাহিনীও পাল্টা গুলি চালানোর অনুমতি পেয়েছে। তিনি আরও জানান, কারফিউ জারি করা বা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করার মতো অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের ফেডারেল রাজধানী ইসলামাবাদে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশটির সংবিধানের ২৪৫ অনুচ্ছেদের আওতায় রাজধানীতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর এক সূত্র জানিয়েছে, সেনাবাহিনীকে অনুচ্ছেদ ২৪৫-এর আওতায় মাঠে নামানো হয়েছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলায় কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে অস্থিতিশীলতা এবং সশস্ত্র হামলাকারীদের শক্ত হাতে দমন করা হয়। এ ছাড়া ‘দেখামাত্র গুলি’ করার নির্দেশও জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাকভি বলেন, ‘রেঞ্জারসরা (আধা সামরিক বাহিনী) গুলি চালাতে পারে এবং তাদের অনুমতি দেওয়া হলে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই কোনো বিক্ষোভকারীই (ইসলামাবাদে) থাকবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে কেউ এখানে (ডি-চকে) পৌঁছাবে, তাকেই গ্রেপ্তার করা হবে।’

এদিকে, ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ এই বিক্ষোভ মিছিলকে শান্তিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে অভিযোগ করেছে, সরকার অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছে এবং বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। পিটিআই জানিয়েছে, প্রায় দুই ডজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছে।

বিগত কয়েক দিনে, বিক্ষোভ ঠেকাতে ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়েছে সরকার। পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে ইমরান খানের হাজার হাজার সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাতে বিক্ষোভ মিছিল রোধ করা যায়। এই সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার।

অপরদিকে, সম্ভাব্য সব ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ইসলামাবাদ ও নিকটবর্তী রাওয়ালপিন্ডির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেবল তা-ই নয়, রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সব ধরনের আন্তনগর গণপরিবহন ও টার্মিনাল বন্ধ রাখা হয়েছে।

পিটিআইয়ের জ্যেষ্ঠ নেতা কামরান বঙ্গাশ বলেছেন, ‘বিক্ষোভকারীরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং আমরা ইসলামাবাদে পৌঁছাবই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একে একে সব বাধা অতিক্রম করব।’

ইমরান খানের আরও ১৪ বছরের কারাদণ্ড, স্ত্রী বুশরার ৭ বছর

পাকিস্তান এয়ারলাইনসের বিজ্ঞাপন নিয়ে বিতর্কের ঝড়, তদন্তের নির্দেশ

পাকিস্তানের পাঞ্জাবে মিলল ৩২ হাজার কেজি স্বর্ণের খনি

যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠনে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের চুক্তি

ইমরান খানকে কারাগার থেকে গৃহবন্দী করার প্রস্তাব, পিটিআই-সরকার আলোচনায় জটিলতা

বিশ্বব্যাংক থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার ঋণের আশায় পাকিস্তান

ওআইসির সহযোগিতায় বাংলাদেশিদের জন্য ফেলোশিপ চালু করল লাহোর ইউনিভার্সিটি

ফেসবুকে প্রেম, বিয়ে করতে পাকিস্তান গিয়ে বিপদে ভারতীয় তরুণ

পাকিস্তানি পরিচয়পত্রধারী ৩ বাংলাদেশি বোন করাচিতে গ্রেপ্তার

তালেবানের পাল্টা হামলা, পাক-আফগান সীমান্তে উত্তেজনা

সেকশন