পানির নিচে চলাচলকারী রোবটের প্রোটোটাইপ পরীক্ষা করছে নাসা। এটি আমাদের সৌরজগতে অবস্থিত গ্রহগুলোর মহাসাগরগুলোর তলদেশে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপার মহাসাগরে অনুসন্ধান চালানোর জন্য নাসার এই রোবটটি তৈরি করা হচ্ছে।
২০৩০ সালে নাসার ইউরোপা ক্লিপার মহাকাশযান বৃহস্পতি গ্রহে পৌঁছানো কথা রয়েছে। মহাকাশযানটি বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপার চারপাশে ৪৯ বার ঘুরে যাবে, যাতে ইউরোপার বরফের নিচে কোনো জীবন বা প্রাণের চিহ্ন খোঁজা যায়। তবে সেই চ্যালেঞ্জের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাসা ইতিমধ্যে নতুন প্রজন্মের মহাকাশযান প্রযুক্তি তৈরি করছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ইউরোপার এবং অন্যান্য গ্রহের মহাসাগরের গভীর পানিতে রোবট পাঠাতে পারবে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্যালটেক, পাসাডেনার একটি সুইমিং পুলে নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির (জেপিএল) একটি দল পানির নিচে রোবটের একটি প্রোটোটাইপ পরীক্ষা শুরু করে। এই পরীক্ষায় রোবটটি পানির নিচে চলাচল এবং বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করতে পারছিল। পরীক্ষার ফলাফলগুলো খুবই ইতিবাচক বলে গবেষকেরা মন্তব্য করেছেন।
এই মিশনটি ‘সেন্সিং উইথ ইনডিপেনডেন্ট মাইক্রো–সুইমার’ (এসডব্লিউআইএম) নামে পরিচিত। প্রজেক্টটিতে একটি বাহিনী কল্পনা করা হয়, যেখানে একাধিক ছোট ও স্বয়ংক্রিয় রোবট থাকবে। রোবটগুলো পৃথিবী থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে ইউরোপার তলদেশে জীবনের চিহ্ন খুঁজে বের করবে।
এসডব্লিউআইএম–এর প্রধান গবেষক, ইথান শেলার বলেন, ‘লোকেরা হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, কেন নাসা মহাকাশ অনুসন্ধানের জন্য পানির নিচে রোবট তৈরি করছে? এর উত্তর হলো—আমাদের সৌরজগতের মধ্যে এমন কিছু স্থান রয়েছে, যেখানে আমরা প্রাণের অস্তিত্বের অনুসন্ধান করতে চাই। জীবনের জন্য প্রয়োজন পানি। তাই আমাদের এমন রোবট দরকার, যা বিভিন্ন পরিবেশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারবে।’
গবেষক দলটি ৩ডি প্রিন্টের মাধ্যমে প্লাস্টিকের প্রোটোটাইপ রোবটটি তৈরি করে। এটি সস্তা মোটর ও ইলেকট্রনিক যন্ত্র ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। দুটি প্রোপেলারের মাধ্যমে চলতে থাকা এই প্রোটোটাইপে চারটি পাখা থাকবে যা সঠিকভাবে পথ অনুসরণ করতে পারবে। পরীক্ষায় দেখা যায়, দলের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়াই রোবটটি কাজগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে করেছে।
শেলার বলেন, ‘এটি খুবই দারুণ যে, একটি রোবট শূন্য থেকে তৈরি করা হয়েছে এবং তা একটি প্রাসঙ্গিক পরিবেশে সফলভাবে কাজ করছে। পানির নিচে চলাচলকারী রোবট তৈরি করা সাধারণভাবে খুব কঠিন একটি কাজ এবং এটি কেবল শুরু। আমাদের মহাকাশ মিশনের জন্য আরও অনেক ডিজাইন তৈরির প্রয়োজন। তবে এটি প্রমাণ করে যে, আমরা এই রোবটগুলোকে প্রয়োজনীয়তা ক্ষমতা দিয়ে তৈরি করতে পারি এবং এগুলো পানির নিচে কি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে তাও জানতে পেরেছি।’
এই রোবটের আকৃতি ছিল—লম্বায় ১৬ দশমিক ৫ ইঞ্চি (৪২ সেন্টিমিটার) এবং ওজন প্রায় ৫ পাউন্ড (২.৩ কিলোগ্রাম)। কিন্তু মহাকাশযাত্রার জন্য এই রোবটগুলোর আকার হবে আরও তিন গুণ ছোট। বিশেষ করে, এই রোবটগুলোতে নতুন ধরনের শব্দভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকবে, যা পানির নিচে ডেটা সরবরাহ করতে সাহায্য করবে।
এ ছাড়া ইউরোপার পরিবেশের মতো চাপ ও মাধ্যাকর্ষণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রোবোটটি পরীক্ষা করা হয়েছে। এই পরীক্ষা গবেষক দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে, যা রোবটগুলোর দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করবে।
একই সময়ে জর্জিয়া টেকের একটি দল এক বিশেষ সেন্সর তৈরি করেছে, যা রোবটগুলোকে একই সঙ্গে তাপমাত্রা, চাপ, অম্লতা, এবং রাসায়নিক সংমিশ্রণ পরিমাপ করার ক্ষমতা দেবে।
তবে এমন একটি উন্নত প্রযুক্তি মহাকাশযাত্রার জন্য আরও কয়েক বছর গবেষণার প্রয়োজন।
শেলার বলেন, সুইম রোবটগুলো আরও উন্নত করে পৃথিবীতেও বৈজ্ঞানিক কাজের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন মহাসাগরীয় গবেষণা বা আর্কটিক বরফের নিচে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা।
তথ্যসূত্র: আর্থ স্কাই