Ajker Patrika

নাসার টেলিস্কোপে দেখা গেল নেপচুনের মেরুপ্রভা

অনলাইন ডেস্ক
গত বুধবার এই ছবি প্রকাশ করেছে নাসা। ছবি: নাসা
গত বুধবার এই ছবি প্রকাশ করেছে নাসা। ছবি: নাসা

নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ প্রথমবারের মতো নেপচুনের অরোরার (মেরুপ্রভা বা মেরুজ্যোতি) ছবি স্পষ্টভাবে ধারণ করা হয়েছে।

১৯৮৯ সালে ভয়েজার ২ মহাকাশযান নেপচুনের পাশ দিয়ে চলে যাওয়ার সময় অতিবেগুনি (ইউভি) রশ্মির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো নেপচুনের অরোরার অস্পষ্ট ছবি তোলা হয়। এবার ওয়েব টেলিস্কোপের ইনফ্রারেড রশ্মির মাধ্যমে নেপচুনে অরোরা তৈরি হওয়ার অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেল।

গত বুধবার এই ছবি প্রকাশ করেছে নাসা এবং এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে নেচার অ্যাস্ট্রোনমি জার্নালে।

সূর্য থেকে বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত কণা (প্রোটন ও ইলেকট্রন) যখন কোনো গ্রহের বায়ুমণ্ডলে গ্যাসের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তখন একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক (তড়িৎ চুম্বক) রেডিয়েশন আকাশে দেখা যায়। এর মাধ্যমে আকাশে আলোর যে বিশেষ আভা দেখা যায়, সেটিই অরোরা। পৃথিবীতে আরোরা সাধারণত মেরু অঞ্চলের কাছে ঘটে, যা নর্দান লাইটস, মেরুপ্রভা বা মেরুজ্যোতি হিসেবে পরিচিত।

শনি ও বৃহস্পতির অরোরা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরেই গবেষণা করছেন। তবে নেপচুন আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রহ হওয়ায় আরোরা নিয়ে গবেষণা বেশ কঠিন।

নেপচুনের বায়ুমণ্ডল থেকে নির্গত আলোকরশ্মি ধারণ ও বিশ্লেষণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের নেয়ার-ইনফ্রারেড স্পেকট্রোগ্রাফ প্রযুক্তি। আলোর বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য ভেঙে বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা গ্রহটির মৌলিক ভৌত পরিমিতি, যেমন—তাপমাত্রা, ভর ও রসায়ন সম্পর্কে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে—ট্রিহাইড্রক্সিজেন (H ₃ ⁺) নিঃসারণ দেখা গেছে, যা বৃহস্পতি, শনি ও ইউরেনাসের মতো গ্রহের অরোরায় একটি প্রধান আয়ন হিসেবে উপস্থিত থাকে। এর মাধ্যমে এটি নিশ্চিত হয়েছে যে, নেপচুনের অরোরাও এসব গ্রহের মতো একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তৈরি হয়।

রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যানেটারি বিজ্ঞানী এবং নতুন গবেষণার সহলেখক জেমস ও’ডনোগু বলেন, ‘নেপচুন সব সময়ই রহস্যময় ছিল। এর আরোরা শুধু ভয়েজার ২-এর মাধ্যমে দেখা গিয়েছিল, আর আমরা সেই মুহূর্তকে পুনরায় দেখার চেষ্টা করছিলাম।’

জেমস ও’ডনোগু জানিয়েছেন, নেপচুনের অরোরা মেরু অঞ্চলের বদলে গ্রহটির মধ্য অঞ্চলে ঘটে। এর কারণ হলো নেপচুনের চুম্বকীয় ক্ষেত্রের পার্থক্য। চুম্বকীয় ক্ষেত্রের এই ভিন্নতা অরোরার বিস্তৃতি বা ছড়িয়ে পড়ার পরিসীমা নির্ধারণ করে।

ভয়েজার ২-এর পর প্রায় ৩ দশক পর নাসার শক্তিশালী ওয়েব টেলিস্কোপের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো নেপচুনের অরোরা স্পষ্টভাবে শনাক্ত হলো।

গবেষকেরা আরও জানিয়েছেন, নেপচুনের বায়ুমণ্ডল ১৯৮০-এর দশকের পর থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে শীতল হয়ে গেছে, যা অরোরার আলোর উজ্জ্বলতা কিছুটা কমিয়ে ফেলেছে।

তথ্যসূত্র: এপি নিউজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত