Ajker Patrika

মঙ্গলে মানব অভিযানের প্রস্তুতি নিতে যেভাবে সাহায্য করছে নাসার রোবট

অনলাইন ডেস্ক
মঙ্গলে ব্যবহারের উপযোগী স্যুটের সঠিক আয়ু নির্ধারণ করছে এই রোবট। ছবি: নাসা
মঙ্গলে ব্যবহারের উপযোগী স্যুটের সঠিক আয়ু নির্ধারণ করছে এই রোবট। ছবি: নাসা

নাসার পারসিভারেন্স রোভারের (রোবট) মাধ্যমে মঙ্গলে প্রথমবারের মতো মহাকাশযাত্রীর স্যুটের কিছু উপকরণের পরীক্ষা হচ্ছে। ২০২১ সালে মঙ্গলে অবতরণ করা পারসিভারেন্স রোভারটি এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ছাড়াও মঙ্গলে মানব অভিযানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতিও নিচ্ছে। রোভারটি মঙ্গলের প্রতিকূল পরিবেশে পাঁচটি মহাকাশযাত্রীর স্যুটের উপকরণ নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে এবং চার বছরের ব্যবধানে এই উপকরণগুলো কতটুকু টিকে থাকছে তা মূল্যায়ন করছেন বিজ্ঞানীরা।

এই পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো—মঙ্গলে ব্যবহারের উপযোগী স্যুটের সঠিক আয়ু নির্ধারণ করা। মঙ্গলে এই উপকরণগুলোর কার্যকারিতা থেকে পাওয়া তথ্য ভবিষ্যতের মহাকাশযাত্রীদের স্যুট ডিজাইন করতে সহায়তা করবে।

নাসার জনসন স্পেস সেন্টারের গ্রহবিদ বিজ্ঞানী মার্ক ফ্রিজ বলেন ‘এটি রোভারের মিশনের একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দিক। শুধু বর্তমান বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান নিয়ে চিন্তা করা এই মিশনের উদ্দেশ্য নয়, বরং ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা নিয়েও ভাবা হচ্ছে। আমরা সেই দিনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি, যখন মানুষ মঙ্গলে গিয়ে সেখানে অনুসন্ধান করবে।

নমুনাগুলোর মধ্যে রয়েছে পলিকার্বোনেট হেলমেট ভিসরের একটি টুকরো, গ্লাভসের ব্যবহৃত তালু সুরক্ষা উপকরণ ভেকট্রান, দুই ধরনের টেফলন (ধুলা প্রতিরোধী এবং ননস্টিক) এবং অর্থো-ফ্যাব্রিক নামের স্পেসস্যুট তৈরির উপাদান। এই কাপড়ে একাধিক স্তর রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আগুন প্রতিরোধী উপাদান নোমেক্স। অগ্নিনির্বাপক পোশাকে এই উপাদান পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে রয়েছে গোর-টেক্স, যা পানি প্রতিরোধী এবং কেভলার, যা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটগুলোতে ব্যবহৃত একটি শক্তিশালী উপাদান।

মঙ্গল গ্রহের পরিবেশ পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে রয়েছে প্রচণ্ড শীত এবং এমন সূক্ষ্ম ধূলিকণা, যা সোলার প্যানেল ও স্যুটের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এ ছাড়া মঙ্গলের পৃষ্ঠ পারক্লোরেট নামের লবণে ভরা, যা মানুষের জন্য বিষাক্ত হতে পারে।

এ ছাড়া এখানে প্রচুর অতিবেগুনি সূর্যরশ্মি রয়েছে। পৃথিবী চুম্বকীয় ক্ষেত্রের মাধ্যমে সূর্যের রশ্মির বেশির ভাগ অংশ প্রতিরোধ করে। তবে মঙ্গল গ্রহ তার চুম্বকক্ষেত্র বিলিয়ন বছর আগে হারিয়েছে এবং এর কিছু সময় পরে তার বায়ুমণ্ডলেরও অনেকাংশ হারিয়েছে। তাই মঙ্গলের পৃষ্ঠে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে খুব একটা সুরক্ষা পাওয়া যায় না।

নাসার বিজ্ঞানী র‍্যাজেল হলিস বলেন, ‘মঙ্গল গ্রহ সত্যিই একটি কঠিন এবং বিপজ্জনক স্থান। এটি নিয়ে অবহেলা করবেন না—বিশেষ করে সূর্যের বিকিরণ এখানে অত্যন্ত ক্ষতিকর।’

২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরিতে (জেপিএল) পোস্ট ডক্টরাল ফেলো ছিলেন র‍্যাজেল হলিস। তিনি সেখানে শালর্ককে মঙ্গলে পৌঁছানোর প্রস্তুতিতে সহায়তা করেন এবং রোভারের অবতরণের পর বৈজ্ঞানিক কার্যক্রমে অংশ নেন।

এর আগেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন হলিস। এর মধ্যে রয়েছে—প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি নতুন ধরনের সোলার প্যানেলের ওপর সূর্যের আলো কীভাবে রাসায়নিক প্রভাব ফেলে এবং প্লাস্টিক-দূষণ পৃথিবীর মহাসাগরের ওপর কী প্রভাব ফেলেছে।

তিনি লক্ষ করেন যে, সাদা প্লাস্টিকের চেয়ার সূর্যের আলোয় বহু বছর পরে হলুদ ও ভঙ্গুর হয়ে ওঠে। প্রায় একই ঘটনা মঙ্গলে ঘটে, তবে সেখানে উচ্চ পরিমাণে আলট্রাভায়োলেট (ইউভি) আলো থাকার কারণে এই প্রক্রিয়া দ্রুত ঘটে।

স্পেসস্যুট উপাদান মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে কত দ্রুত ‘ক্ষয়’ হবে, তা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শালর্ক যে নমুনাগুলোর ওপর নজর রেখেছিল, সেগুলোর প্রায় ৫০ শতাংশ পরিবর্তন ঘটেছে পারসিভারেন্স রোভারের মঙ্গল গ্রহে পৌঁছানোর প্রথম ২০০ দিনের মধ্যে। এর মধ্যে ভেকটার্ন উপাদানটি প্রথম পরিবর্তিত হতে দেখা গেছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—স্পেসস্যুটের বিভিন্ন অংশ কী পরিমাণ সৌর বিকিরণ সহ্য করতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, একজন মহাকাশচারীর হাতের তালুর চেয়ে কাঁধগুলোর ওপরে এসব রশ্মি বেশি প্রভাব ফেলবে।

অর্থো-ফ্যাব্রিকে একাধিক স্তর রয়েছে। ছবি: নাসা
অর্থো-ফ্যাব্রিকে একাধিক স্তর রয়েছে। ছবি: নাসা

শালর্ক দলের গবেষকেরা একটি গবেষণাপত্র প্রস্তুত করছেন, যাতে তারা মঙ্গলে নমুনাগুলোর প্রাথমিক তথ্য ও সেগুলোর কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করবে। এদিকে, নাসা জনসনের বিজ্ঞানীরা মঙ্গলের পরিবেশ অনুকরণ করতে বিশেষ চেম্বার তৈরি করছেন। এই চেম্বারে মঙ্গলের মতো বায়ুমণ্ডল, বায়ুচাপ এবং আলট্রাভায়োলেট (ইউভি) রশ্মি থাকবে। এর মাধ্যমে তারা পৃথিবীতে পরীক্ষার ফলাফলগুলো শালর্ক ডেটার সঙ্গে তুলনা করতে পারবেন।

পারসিভারেন্সের মঙ্গলে মিশনের প্রধান লক্ষ্য হলো প্রাণের অনুসন্ধান, বিশেষত প্রাচীন অণুজীবগুলোর চিহ্ন খুঁজে বের করা। রোভারটি মঙ্গলের ভূতত্ত্ব এবং অতীতের জলবায়ু বিশ্লেষণ করছে, যা ভবিষ্যতে মানব অভিযান পরিচালনার জন্য সাহায্য করবে। এটি মঙ্গলের শিলা ও মাটি (রেগোলিথ) সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার প্রথম মিশন।

এদিকে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির (ইএসএ) সহযোগিতায় নাসার মার্স স্যাম্পল রিটার্ন প্রোগ্রামটি চলছে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে নাসা মঙ্গলের পৃষ্ঠ থেকে নমুনাগুলো সংগ্রহ করবে এবং সেগুলো পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করবে।

পারসিভারেন্স মিশন নাসার মার্স এক্সপ্লোরেশন প্রোগ্রামের অংশ এবং এটি নাসার ‘মুন টু মার্স’ পরিকল্পনার অংশ, যার মাধ্যমে আর্টেমিস মিশনগুলো চাঁদে অভিযান চালিয়ে মঙ্গলে মানব অভিযানের প্রস্তুতি নেবে।

তথ্যসূত্র: নাসা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাসিনার আমলে গভর্নর হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলাম: আহসান এইচ মনসুর

আলোচনায় ড. ইউনূসকে প্রধানমন্ত্রী দেখার আকাঙ্ক্ষা, আইনি পথ কী

এক দশক পর প্রকাশ্যে গায়িকা ডাফি, শোনালেন অপহরণ ও ধর্ষণের ভয়াবহ বর্ণনা

জাতীয় ঈদগাহে যাবেন না রাষ্ট্রপতি, ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়বেন বঙ্গভবনে

শেখ হাসিনাকে ভারতে রেখে নির্বাচন পেছালে দেশের সংকট বাড়বে: ফখরুল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত