বেঁচে থাকার জন্য আট বছর ধরে ডায়ালাইসিস করাতেন আলাবামার বাসিন্দা টোয়ানা লুনি। কিন্তু গত মাসে একটি শূকরের কিডনিতে জিনগত পরিবর্তন (জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন) এনে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে লুনির দেহে। যা তাঁকে ডায়ালাইসিসের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়েছে। নতুন জীবন পেয়েছেন টোয়ানা লুনি। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটি মানবদেহে পশুর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
৫৩ বছর বয়সী লুনি বলেন, ‘এটি যেন নতুন জীবনের শুরু। সচল একটি কিডনি পেয়ে দারুণ অনুভূতি হচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে টোয়ানা লুনি হলেন পঞ্চম ব্যক্তি, যাঁর শরীরে শূকরের কিডনি (জিনগত পরিবর্তন এনে) প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এর আগে যাঁদের দেহে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল, তাঁদের অধিকাংশই দুই মাসের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন। তবে লুনি অন্যদের তুলনায় সুস্থ। কিডনি প্রতিস্থাপনের পর থেকে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন।
নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ল্যাঙ্গোন হেলথের চিকিৎসক ড. রবার্ট মন্টগোমারি লুনির দেহে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপনের কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘এই সাফল্য ভবিষ্যতে মানবদেহে পশুর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সম্ভাবনা বাড়াবে।’
লুনি বর্তমানে ভালো আছেন এবং ১১ দিনের মাথায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। যদিও কিছু ওষুধের জন্য তাঁকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে চিকিৎসকেরা আশা করছেন, তিন মাসের মধ্যে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে নিজ শহরে ফিরে যেতে পারবেন।
১৯৯৯ সালে টোয়ানা লুনি নিজের একটি কিডনি তাঁর মাকে দান করেছিলেন। পরবর্তীতে গর্ভাবস্থায় জটিলতার কারণে উচ্চ রক্তচাপের শিকার হন। তখন তাঁর অপর কিডনিটিও বিকল হয়ে যায়। ডায়ালাইসিসের পাশাপাশি অনেক চেষ্টা করেও তিনি মানবদেহে প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত কিডনি পাননি।
লুনি বলেন, ‘আমি জানতাম এটি ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু চেষ্টা না করলে সফলতার সম্ভাবনা জানা সম্ভব নয়।’
লুনির দেহে কিডনি প্রতিস্থাপনে ব্যবহৃত হয়েছে একটি শূকরের কিডনি। যার মধ্যে জিনগত পরিবর্তন বা জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন এনে মানবদেহে প্রতিস্থানের জন্য প্রস্তুত করেছে রেভিভিকর নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিস্থাপনের পরপরই এটি কার্যকরী হয়ে প্রস্রাব উৎপাদন শুরু করে।
ড. মন্টগোমারি বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করছি। এই গবেষণা অঙ্গ প্রতিস্থাপনে সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করবে।’
লুনি তাঁর দীর্ঘদিনের চিকিৎসক ড. জেমি লকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, যিনি প্রথম থেকেই এই প্রক্রিয়াটির জন্য লুনির পাশে ছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, এই গবেষণা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সংকট সমাধানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে এবং এতে বহু রোগীর জীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে।