যুক্তরাজ্যের জাতীয় শিক্ষাক্রমে নিজের ভিডিও অন্তর্ভুক্ত হবে বলে আশা করেন ২৭ বছর বয়সী এমানুয়েল ওয়ালেস নামের এক টিকটকার। তিনি বিজ্ঞান শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন ভিডিও এই প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করে। তার বেশ কিছু ভিডিও ভাইরাল রয়েছে এবং চলতি বছরে টিকটক অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। ২০২৪ সালের পর থেকে ছোট ফরম্যাটের ভিডিও শিক্ষা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হবে বলে মনে করেন তিনি।
পূর্ব লন্ডনের এমানুয়েল ওয়ালেসের টিকটকে প্রায় ১৯ লাখ ফলোয়ার রয়েছে। তিনি ফলোয়ারদের কাছে ‘বিগ মানি’ নামে পরিচিত। তিনি প্ল্যাটফর্মটিতে বিভিন্ন বিজ্ঞান পরীক্ষার ভিডিও শেয়ার করেন। তিনি বিভিন্ন খুব সহজ ভাষায় জামাইকার ও লন্ডনের স্ল্যাং ব্যবহার করে এসব পরীক্ষা ব্যাখ্যা করেন।
ডিসেম্বরের শুরুতে টিকটক অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে ‘এডুকেশন ক্রিয়েটর অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার অর্জন করেন ওয়ালেস। পুরস্কার গ্রহণের সময় তিনি বলেন, ‘এটি একটি প্রতীক যে, আপনি যদি কিছু মন দিয়ে করেন, তবে তা অর্জন করতে পারবেন।’
করোনা মহামারির সময় ভিডিও তৈরি শুরু করেন এই কনটেন্ট ক্রিয়েটর। সেসময় শিক্ষাদানের প্রধান মাধ্যম হয় অনলাইন। তবে পরবর্তীতে তিনি তার শিক্ষাদানকে ভিডিও থেকে বইয়ের মাধ্যমে সম্প্রসারিত করেন এবং আগস্টে ‘সায়েন্স ইজ লিট’ নামে তার প্রথম বই প্রকাশ করেন।
তিনি বিশ্বাস করেন যে, তার ‘অপ্রচলিত’ শিক্ষাদানের পদ্ধতিগুলো তরুণ শ্রোতাদের কাছে তার কনটেন্ট গুলো আরও গ্রহণযোগ্য তোলে। কারণ তিনি তার জামাইকান এবং ব্রিটিশ ভাষার স্ল্যাং ব্যবহার করেন।
পি. এ. নিউজ এজেন্সিকে টিকটকার জানান, ‘আমি যে ভাষাটি ব্যবহার করি, তা জামাইকান পাটোইস এবং লন্ডন স্ল্যাং-এর একটি মিশ্রণ। কারণ আমি জামাইকান বংশোদ্ভূত। আমার ভিডিওগুলোতে কখনো কখনো ওয়াগয়ান (হোয়াটস গোয়িং অন বা কি অবস্থা) বা ইউ ডুন নো (ইউ অলরেডি নো বা তুমি জানো)। আমি শুধু তরুণদের সঙ্গে আরও বেশি সংযুক্ত হতে চাই, তাই আমি তাদের ভাষার ধরনের মতো একই রকম কথা বলি।
এমানুয়েল বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সে ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
তার জনপ্রিয় ভিডিওগুলোর মধ্যে রয়েছে—লিথিয়াম ব্যাটারি কাঁচা মুরগির বুকে রেখে আগুন লাগানো, এবং সোনা ও গ্যালিয়াম মিশিয়ে নীল সোনা তৈরি করা। এগুলো লাখ লাখ ভিউ অর্জন করেছে। তার কনটেন্ট বিজ্ঞান শিল্পকে আরও বৈচিত্র্যময় করতে সাহায্য করবে বলে তিনি আশা করেন।
এমানুয়েল ওয়ালেস লক্ষ্য করেছেন যে, আরও বেশি তরুণ সামাজিক মিডিয়া অ্যাপগুলোকে শেখার উৎস হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে এবং শিগগিরই ছোট ফরম্যাটের ভিডিওগুলো স্কুলের জাতীয় পাঠক্রমের অংশ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।
ওয়ালেস বলেন, ‘তরুণেরা সামাজিক মিডিয়াকে শিক্ষা উপকরণ হিসেবে অনেক বেশি ব্যবহার করছে এবং আমি মনে করি ভবিষ্যতে এটি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।’
এমানুয়েল ওয়ালেস তার প্ল্যাটফর্মটি বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ব্যবহার করেন, যা ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে তিনি মনে করেন। তার একটি ভিডিওতে অভিনেতা ইদ্রিস এলবা দ্বারা সমর্থিত একটি নাইফ-ভায়োলেন্স (ছুরি সহিংসতা) বিরোধী ক্যাম্পেইন তুলে ধরা হয়েছিল। ভিডিওটি ব্যাপক সাড়া পেয়েছিল এবং ৩৯ মিলিয়নেরও বেশি ভিউ অর্জন করেছে। ভিডিওটি তরুণদের মধ্যে ছুরি দিয়ে আক্রমণ এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছানোর লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছিল।
নাইফ-ভায়োলেন্স বা ছুরি সহিংসতা, বিশেষ করে গ্যাং সম্পর্কিত সহিংসতা, বর্তমানে যুক্তরাজ্যের একটি গুরুতর সমস্যা। মূলত শহুরে এলাকাগুলোতে, বিশেষ করে লন্ডনসহ বিভিন্ন শহরে, তরুণরা একে অপরকে ছুরি দিয়ে আক্রমণ করে থাকে, যা সমাজে আতঙ্ক ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে। এই ধরনের সহিংসতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে এবং এটি বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে বিদ্যমান গ্যাং কালচার এবং অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত। যুক্তরাজ্যে নাইফ-ভায়োলেন্সের ব্যাপকতা এতটা বৃদ্ধি পেয়েছে যে, অনেক শহর এই সমস্যাকে ‘ইমারজেন্সি’ হিসেবে বিবেচনা করছে এবং এটি সামাজিক নিরাপত্তার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে, ওয়ালেসের ভিডিও এবং তার প্রচারণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সামাজিক মাধ্যম, বিশেষত টিকটক, এখন তরুণদের কাছে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত একটি প্ল্যাটফর্ম। তাই, এখানে ছুরি সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ, তরুণদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়ক হতে পারে। তার আরেকটি সচেতনতামূলক ভিডিও যা ডিসপোজিবল ভেপের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ছিল। সেটিতে ৪ দশমিক ৬ মিলিয়নেরও বেশি ভিউ ছিল।
তিনি বলেন, অনলাইনে বড় ফলোয়ার থাকায় শিক্ষক হিসেবে তিনি কিছু চাপ রয়েছে অনুভব করেন, তবে তিনি তরুণদের জন্য একটি রোল মডেল হতে পারবেন বলে আশা করেন।