ভয়, আতঙ্ক, বিস্ময় বোঝাতে ‘পিলে চমকানো’ বিশেষণটি বাংলা ভাষায় ব্যাপকভাবেই ব্যবহৃত হয়। শব্দটি তৎসম বা সংস্কৃত প্লীহা থেকে এসেছে। এটি আসলে শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ। পেটের বাম ভাগের ওপরের অংশে অবস্থিত প্রত্যঙ্গটির ইংরেজি নাম স্প্লিন (spleen)।
স্নায়বিক উত্তেজনার মুহূর্তে এই প্রত্যঙ্গে কী এমন ঘটে যে বাংলায় ‘পিলে চমকানো’ বিশেষণটি এত জনপ্রিয়তা পেল?
এটি বোঝার জন্য শারীরবিদ্যার দিকে একটু নজর দেওয়া যাক। প্লীহা হলো লসিকাতন্ত্র এবং রক্ত সংবহনতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীতে রক্তের আয়তন প্লীহার সংকোচন-প্রসারণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। অর্থাৎ প্লীহা রক্তের ‘রিজার্ভার’ হিসেবে কাজ করে বলে ধরে নেওয়া যায়।
সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রায় ৭ সেন্টিমিটার থেকে ১৪ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এ প্রত্যঙ্গের ওজন হয় ১৫০ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রাম। নবম, দশম ও একাদশ পাঁজরের মাঝামাঝি ঝুলন্ত অংশের পেছনে মধ্যচ্ছদার ঠিক নিচেই এর অবস্থান। দক্ষ চিকিৎসকেরা ওই পাঁজরের নিচে হাত দিয়ে চাপ দিলেই প্লীহার অবস্থান ও অবস্থা কিছুটা আঁচ করতে পারেন।
আবার কিছু কিছু রোগে প্লীহার আকার বেড়ে যায়। প্রাচীন বাংলায় ম্যালেরিয়া ছিল এই ধরনের রোগের একটি। এ কারণেই ম্যালেরিয়াকে ‘পিলে জ্বর’ও বলা হয়। আর সারা বছর বারবার ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হওয়ার ফলে অনেক শিশুর পীলে স্ফীত ও কালো হয়ে যেত বলে এই ঘটনাকে ইংরেজিতে বলা হয় হাইপারস্প্লেনিজম।
কালাজ্বর, থ্যালাসেমিয়া, ক্রনিক মায়োলয়েড লিউকেমিয়া ইত্যাদি রোগের কারণেও প্লীহার আকার বেড়ে যেতে পারে।
প্লীহা কোনো রোগের কারণে খুব বড় হয়ে গেলে পেটের মধ্যে অনেকটা নিচ অবধি চলে আসে। তখন পেটে সামান্য চোট থেকেও প্লীহা ছিঁড়ে যেতে পারে। প্লীহা ছিঁড়ে গেলে তাৎক্ষণিক অস্ত্রোপচার করতে হয়। বর্ধিত প্লীহা কেটে বাদ না দিলে পেটের মধ্যে রক্তক্ষরণে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
অতিরিক্ত ব্যায়াম ও হাইপোক্সিক গ্যাসের কারণে প্লীহার আকার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
তার মানে, পিলে চমকে যাওয়া শুধুই প্রচলিত বিশেষণ নয়, এটি আসলে সুনির্দিষ্ট শারীরবৃত্তীয় অস্বাভাবিকতা।