ইশতিয়াক হাসান
মিয়ানমারের টংথামান হ্রদের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ইউ বেইন সেতুটিকে দীর্ঘ, নড়বড়ে একটি সাধারণ কাঠের সেতু বলেই মনে হবে প্রথম দেখায়। তবে যখন জানতে পারবেন পুরোনো একটা রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ থেকে এটি বানানো হয়েছে, তখন নিশ্চয় চোখ কপালে উঠবে। ১৮৬০ সালের দিকে তৈরি করা হয় সেতুটি, ওই সময়কার মেয়র ইউ বেইনের উদ্যোগে। অর্থাৎ এর বয়স এখন ১৬৩ বছর।
অমরাপুরার এই সেতুটি বেশ কতকটা বেশ সোজাভাবে এগিয়ে একটা কড়া বাঁক নিয়েছে। গভীর হ্রদটির নিচ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া এক হাজারের মতো সেগুন কাঠের পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে আছে সেতু বা সাঁকোটি। সেগুন কাঠের যে তক্তাগুলো সেতুর মেঝের কাজ করছে সেগুলো এবং কাঠের পিলারগুলো নেওয়া হয়েছে মিয়ানমারের এক সময়কার রাজধানী অমরাপুরার ইনওয়ার রাজপ্রাসাদ থেকে।
১৮৫৯ সালে রাজা মিন্দন রাজধানী অমরাপুরা থেকে মান্দালয়ে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি চেয়েছিলেন অমরাপুরা প্রাসাদসহ বিভিন্ন স্থাপনার যতটা সম্ভব ভেঙে সঙ্গে নিতে, যেন মান্দালয়ে নতুন রাজধানী গড়ে তোলার কাজে এগুলো ব্যবহার করা যায়। এ সময় অমরাপুরার মেয়র ইনওয়া প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ থেকে কিছু সেগুন সংগ্রহ করে ফেলতে পারলেন। এই দিয়ে টংথামান হ্রদের ওপর শুরু করলেন সেতুটি বানানোর কাজ। পরবর্তীতে মেয়র ইউ বেইনের নামেই হয়ে গেল সেতুর নাম।
১.২ কিলোমিটার লম্বা সেতুটি। এর খুঁটিগুলো রেলিং ছাড়া কাঠের একটি সেতুর বিবেচনায় অনেকই লম্বা। এই এলাকার পর্যটক টানে এমন স্থাপনার মধ্যে এ সেতুটি আছে এক নম্বরে। তেমনি আশপাশে বেশ কয়েক মাইলের মধ্যে যতটা স্থাপনা বা দ্রষ্টব্য স্থান আছে সবগুলোর মধ্যে এ সেতুর ছবি তোলাই বেশি পছন্দ পর্যটকদের। বিশেষ করে সেতুটি অসাধারণ এক রূপ লাভ করে সন্ধ্যায়, যখন অস্তায়মান সূর্যরশ্মি সেতুসহ চারপাশকে আশ্চর্য এক রং দেয়। অর্থাৎ সূর্যাস্তের আগে ও সূর্যাস্তের সময় সবচেয়ে বেশি পর্যটকের আনাগোনা চোখে পড়ে এখানে।
সূত্র: এটলাস অবসকিউরা, গ্লোবো ট্রেকস ডট কম, ট্র্যাভেল ইন মিয়ানমার