পূর্ব জেরুজালেমের একটি ফিলিস্তিনি এলাকা বিশাল আকারের অসংখ্য খোলা চোখের গ্রাফিতি দিয়ে ভরিয়ে তুলেছিলেন একদল শিল্পী। চোখগুলো প্রতিবেশী এলাকা সিলওয়ানের দিকে তাক করা ছিল, যেখানে প্রতিনিয়ত ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী জোরপূর্বক বসতি স্থাপন করে চলেছে এবং ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করছে। ভীষণ শক্তিশালী সে গ্রাফিতি আলোড়ন তুলেছিল পুরো বিশ্বে।
প্রতিবাদ কিংবা সচেতনতার জন্য গ্রাফিতি এক দারুণ অস্ত্র। এবার পাহাড় ও বৃক্ষে সুশোভিত চট্টগ্রামের সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) এলাকাতেও আঁকা হলো সেরকম এক দুর্দান্ত গ্রাফিতি। সিআরবি রক্ষা আন্দোলন ও সে আন্দোলনকে সমর্থন এবং বিশ্বব্যাপী প্রকৃতি নিধনের প্রতিবাদ জানাতে সম্প্রতি সেখানকার একটি পাহাড়ের পাদদেশে এই নান্দনিক দেয়ালচিত্র এঁকেছেন চট্টগ্রামেরই দুই তরুণ চিত্রশিল্পী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় অধ্যয়নরত এই দুই তরুণের নাম ত্বোয়াসীন আরাফাত ত্বোয়াহা ও আরহাম হাবীব। দুজনেরই জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। ত্বোয়াহা আরবি ও বাংলা ক্যালিগ্রাফি এবং গ্রাফিক ডিজাইন করে এরই মধ্যে দেশ-বিদেশে বেশ নাম কুড়িয়েছেন। আর আরহাম কমিকস ও অ্যানিমেশন নিয়ে কাজ করছেন এবং শিশুদের বই অলংকরণে হাত পাকাচ্ছেন।
শিল্পী ত্বোয়াহা বলেছেন, ‘সিআরবির ঘটনা থেকে বোঝা যায়, নিজেদের প্রয়োজন দৃশ্যমান হওয়ার আগে পর্যন্ত আমরা প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন নই। প্রতিবাদের সময় প্রকৃতির প্রতি দরদ দেখালেও আমরা প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতিপ্রেমী হতে পারিনি। তাই আমাদের চারপাশে, আমাদেরই চোখের সামনে বন, বৃক্ষ ও পাহাড় উজাড় হচ্ছে। আমাদের চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার থাকছে না।’
ত্বোয়াহা আরও জানান, প্রকৃতি রক্ষায় এই যে মানুষের উদাসীনতা, এটি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে প্রযুক্তি ও অন্তর্জালের নেশায় বুঁদ তরুণেরা যদি প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা, আবেগ ও উদ্বেগ অনুভব না করেন, তবে প্রকৃতির ধ্বংস অনিবার্য। এসব কথা বিবেচনায় রেখেই যান্ত্রিকতার প্রতীকী ছবির সঙ্গে ‘জীবন কিংবা বৃক্ষ’ লিখে এই গ্রাফিতি তৈরি করেছেন তাঁরা।
গ্রাফিতিতে দেখা যায়, যান্ত্রিক মানুষটির গলার সঙ্গে যুক্ত কিছু তার কয়েকটি মাছকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ত্বোয়াহা বলেন, ‘এখানে আমাদের কৃত্রিম ও সীমাবদ্ধ জীবনযাপন এবং দেয়ালের বাইরের প্রকৃতির সঙ্গে মিশতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা দৃশ্যমান করা হয়েছে।’