ইশতিয়াক হাসান
বন্যপ্রাণীদের যদি স্কুলে যেতে হতো তবে এই প্রাণীরা বেশ বিপদেই পড়ত। কারণ চূড়ান্ত রকমের অলস এরা। দিনে ২০ ঘণ্টার মতো ঘুমিয়েই কাটায়। এমনকি যখন জাগা থাকে তখনো এরা খুব একটা নাড়াচাড়া করতে পছন্দ করে না। এতটাই অবিশ্বাস্যরকম অলস যে শুয়ে-বসে থাকতে থাকতে লোমে শেওলা জন্মে যায়।
এখন নিশ্চয় জানতে চাইবেন এই প্রাণীটির নাম কী? এরা কোথায় বাস করে? আজব এই প্রাণীটির নাম শ্লথ। মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণমণ্ডলীয় অরণ্যে বাস শ্লথদের। থাকে সেখানকার গাছে।
লম্বা হাত আর উসকো-খুসকো পশমের কারণে শ্লথদের বানরের একটি প্রজাতি ভেবে ফেলতে পারেন। তবে সত্যিকার অর্থে পিপীলিকাভূক বা আর্মিডিলোর কাছাকাছি গোত্রের প্রাণী এরা।
সাধারণত দুই থেকে আড়াই ফুট পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের হয় এরা। প্রজাতিভেদে ওজন আট থেকে ১৭ পাউন্ড। শ্লথদের মূল প্রজাতি দুটি। গোলাকার মাথা, দুঃখী চেহারার চোখ, খুদে কান এবং মোটা ও শক্ত লেজ মিলিয়ে দেখতে অনেকটা একই রকম দুই প্রজাতির শ্লথেরাই।। এদের মূল পার্থক্য, সামনের পায়ে। সেখানে প্রজাতি ভেদে দুই কিংবা তিনটা আঙুল থাকে। বুঝতেই পারছ দুই আঙুলেরা টু-টোড শ্লথ আর তিন আঙুলেরা থ্রি টোড শ্লথ।
দুই আঙুলেরা গায়ে-গতরে একটু বড় থ্রি টোড বা তিন আঙুলে শ্লথদের চেয়ে। তেমনি তিন আঙুলে জ্ঞাতিদের চেয়ে গাছে বেশি সময় উল্টোভাবে ঝুলে কাটায় এরা। থ্রি টোড শ্লথরা প্রায়ই গাছের একাধিক ডালের সংযোগস্থলে সোজাভাবে বসে থাকে। তিন-আঙুলের স্লথদের মুখে কিছুটা রঙের খেলা দেখতে পাবেন, যা দেখে মনে হয় তারা সব সময় হাসছে। তাদের ঘাড়ে দুটি অতিরিক্ত কশেরুকাও রয়েছে। এতে প্রায় গোটা মাথাটাই ঘুরাতে পারে।
কোনো কোনো বিজ্ঞানী মনে করেন, শ্লথেরা তাদের এমন আলসে, ধীরগতির জীবন-যাপন পদ্ধতি গড়ে তুলেছে বাজ কিংবা বিভিন্ন ধরনের বিড়াল গোত্রের প্রাণীদের চোখে যেন সহজে ধরা না পড়ে সে জন্য। এ ধরনের প্রাণীরা শিকারের সময় নিজেদের ধারালো দৃষ্টিশক্তির ওপর নির্ভর করে।
গাছ থেকে খুব কমই নামে শ্লথ। সেখানে কখনো কখনো ধারালো নখের সাহায্যে ডাল আঁকড়ে ধরে চলাফেরা করে। সপ্তাহে একবার নিচে নেমে আসে প্রাকৃতিক কর্মটা সারতে।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক কিডস, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার