অনলাইন ডেস্ক
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) দলের নেতা অনূঢ়া কুমারা দেশনায়েকের বিজয় দেশটির ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিবর্তন। কারণ নতুন প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) জোটের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এই জোটের মূলে রয়েছে মার্ক্সবাদী বামপন্থী মতাদর্শ। রয়েছে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও। এর ফলে এই প্রথমবারের মতো শক্তিশালী বামপন্থী পটভূমির একজন নেতা শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন।
শ্রীলঙ্কায় বামপন্থীদের এই বিজয়কে একটি চমক হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কারণ এনপিপি জোট এর আগে শ্রীলঙ্কায় খুব বেশি প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেনি। এমনকি তারা কখনো শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে বিরোধী দলেও ছিল না। দেশটির বিগত সংসদে ২২৫টি আসনের মধ্যে মাত্র তিনটি আসন ছিল তাদের।
ধারণা করা হচ্ছে, নতুন প্রেসিডেন্ট দেশনায়েকে শিগগিরই সংসদ ভেঙে দিয়ে সংসদ নির্বাচন ডাকবেন।
এক সময় একজন বহিরাগত হিসেবে বিবেচিত দেশনায়েকের উত্থান ২০২২ সালে। সেই সময়টিতে গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে তীব্র গণ–অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছিল দেশটিতে। আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতি এবং ধীরে ধীরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকলে দেশজুড়ে অস্থিরতা তৈরি হয়। এই অস্থিরতা শেষ পর্যন্ত দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।
বলা হচ্ছে, অর্থনৈতিক টালমাটালের সেই সময়টিতে দেশনায়েকের প্রচার শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর আচরণ ও কর্মকাণ্ডে হতাশ ভোটারদের অনুপ্রাণিত করেছিল। আর পরিবর্তনের অনুভূতিকে পুঁজি করে অনুরণিত হয়েছিল তাঁর দলও।
সেই সময়টিতে রাস্তায় নেমে আসা শ্রীলঙ্কার লাখ লাখ নাগরিকের কাছে দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে বিতাড়িত করা ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। সাধারণ মানুষের এই মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে নতুন বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন দেশনায়েকে ও তাঁর দল।
২০০০–এর দশকের শুরুর দিকে যখন চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সেই সময়টিতে শ্রীলঙ্কার জোট সরকারে সংক্ষিপ্ত মেয়াদে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন দেশনায়েকে। বদলে যাওয়া শ্রীলঙ্কার অনেক ভোটার তাঁকেই নতুন বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাঁর সমর্থকেরা বলছেন, অতীতে সরকারের অংশ হলেও তিনি কখনোই দুর্নীতি কিংবা ব্যক্তিস্বার্থের দ্বারা কলঙ্কিত হননি।
শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে আরও অনেকভাবেই মিলে গেছেন দেশনায়েকে। কারণ গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম (১৯৬৮)। পরে কেলানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক। ছাত্রজীবনেই তিনি বামপন্থী মতাদর্শের জনতা বিমুক্তি পেরামুনা দলে যোগ দেন। ২০০০ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে তিনি প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার সংসদ সদস্য হন।
দেশনায়েকের দল জেভিপির বিরুদ্ধে অতীতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার থাকার অভিযোগ ছিল। ১৯৭১ এবং ১৯৮০–এর দশকের শেষ দিকে এই দলটি শ্রীলঙ্কায় মার্ক্সবাদে অনুপ্রাণিত বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিল। তবে এর জন্য বড় মূল্য দিতে হয় দলটিকে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন, অপহরণ ও গণহত্যায় এই দলের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্তত ৬০ হাজার মানুষ নিহত হয়। নিহত হন দলের প্রতিষ্ঠাতা রোহানা উইজেবিরাসহ বেশির ভাগ জ্যেষ্ঠ নেতাও।
তবে ২০১৪ সালে দেশনায়েকে এই দলটির নেতৃত্ব গ্রহণ করার পর সহিংসতা এবং অতীতের কালিমা থেকে দলের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শুরু করেন। দুর্নীতি মোকাবিলার প্রতিশ্রুতিই এখন এই দলের মূল স্লোগান। এই স্লোগানেই আস্থা রেখেছেন শ্রীলঙ্কার জনগণ।