অনলাইন ডেস্ক
সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে তাঁর দেশের সম্পর্ক নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, বিতর্কিত ভারত-চীন সীমান্তে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে এবং তিনি দুই দেশের মধ্যে আরও দৃঢ় সম্পর্কের আহ্বান জানিয়েছেন।
মোদির এই মন্তব্য উল্লেখযোগ্য। কারণ, ২০২০ সালে উত্তর লাদাখে (গালওয়ান সীমান্ত) এক ভয়াবহ সীমান্ত সংঘর্ষের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। এই উত্তেজনা এতটাই বেশি ছিল যে,১৯৬২ সালে দুই দেশের মধ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিল, তার পর সবচেয়ে মারাত্মক।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং মোদির বক্তব্যের প্রশংসা করে ঘোষণা করেছেন, ‘দুই দেশের উচিত এমন অংশীদার হওয়া, যারা একে অপরের সাফল্যে অবদান রাখবে।’
অবশ্য, মোদির ঘনিষ্ঠ অংশীদারত্বের আহ্বান সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতির পরিপ্রেক্ষিতে ততটা বড় উল্লম্ফন নয়, যতটা মনে করা হতে পারে। তবে সম্পর্ক এখনো চাপা উত্তেজনাপূর্ণ এবং সত্যিকারের পুনর্মিলনের জন্য দ্বিপক্ষীয়ভাবে এবং বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিকভাবে অনেক কিছুকে সঠিক পথে আগাতে হবে।
ভারত-চীন সম্পর্কের অনেক উজ্জ্বল দিক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী। এমনকি লাদাখ সংঘর্ষের পরেও চীন ভারতের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার ছিল। প্রধান উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট ব্রিকস থেকে শুরু করে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) পর্যন্ত দুই দেশ বহুপক্ষীয়ভাবে সহযোগিতা করে আসছে। তারা অ-পশ্চিমা অর্থনৈতিক মডেল এগিয়ে নেওয়া, ইসলামি সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘নৈতিক ক্রুসেড’ প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে দুই দেশ একই মনোভাব পোষণ করে।
লাদাখের সংঘর্ষের পর দুই দেশের সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এলেও, দুই দেশের সামরিক বাহিনী উচ্চ-পর্যায়ের সংলাপ চালিয়ে গেছে, যার ফলে অক্টোবরে সীমান্ত টহল পুনরায় শুরুর একটি চুক্তি হয়। মোদি সেই মাসে রাশিয়ার ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁরা আরও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। জানুয়ারিতে দুই পক্ষ সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় শুরু করতে সম্মত হয়।
তবুও, সম্পর্কে সমস্যা রয়েই গেছে। উভয় দেশের অন্য দেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা সম্পর্ক আছে—ভারতের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এবং চীনের পাকিস্তানের সঙ্গে। চীন কাশ্মীর অঞ্চলে ভারতীয় নীতির বিরোধিতা করে। বেইজিং পারমাণবিক সরবরাহকারী গোষ্ঠীর মতো প্রভাবশালী গোষ্ঠীতে এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ লাভে বাধা দিয়ে ভারতের শক্তিধর হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে হতাশ করে।
চীনের বিশাল নৌবাহিনী আছে এবং ভারতের বৃহত্তর সামুদ্রিক অঞ্চলে বেইজিংয়ে একমাত্র বিদেশি সামরিক ঘাঁটি আছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নামের সংযোগ করিডরের মাধ্যমে বেইজিং ভারতের প্রতিবেশী অঞ্চলে তার পদচিহ্ন রেখেছে। এই বিষয়টিকে দিল্লি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ, এই প্রকল্প ভারতের নিজস্ব প্রভাব বলয় বলে পরিচিত অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গেছে।
এদিকে, ভারত তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করছে। অথচ, চীন তাইওয়ানকে তার অংশ এবং বিদ্রোহী প্রদেশ হিসেবে দেখে। দিল্লি তিব্বতের নির্বাসিত নেতা দালাই লামার আশ্রয়দাতা। বেইজিং তাঁকে বিপজ্জনক বিচ্ছিন্নতাবাদী মনে করে। ভারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির আলোচনা করছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা উসকানি ঠেকাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। ভারত যে সব বৈশ্বিক ফোরামের সদস্য—যেমন কোয়াড, মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর—চীন সেগুলোকে তার বিরুদ্ধে প্রচেষ্টা হিসেবে দেখে।
এই দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গতিপথের বিষয়ে ভালো ধারণা পেতে বেশ কয়েকটি লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা দরকার। একটি হলো সীমান্ত আলোচনা। ২ হাজার ১০০ মাইল বা ৩ হাজার ৩৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের পঞ্চাশ হাজার বর্গমাইল অঞ্চল—বাংলাদেশের আয়তনের চেয়ে সামান্য কম—এখনো বিতর্কিত।
সীমান্তের পরিস্থিতি সম্পর্কের সবচেয়ে বড় মাপকাঠি। লাদাখ সংঘর্ষ দুই দেশের মধ্যকার আস্থা-বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে; গত বছরের টহল চুক্তি তা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করেছে। যদি দুই পক্ষ আরও আস্থা বৃদ্ধিমূলক পদক্ষেপ তৈরি করতে পারে, তবে এটি সম্পর্কের জন্য শুভ হবে।
ভবিষ্যতের উচ্চ-পর্যায়ের সম্পৃক্ততাও গুরুত্বপূর্ণ। মোদি এবং সি—যারা ব্যক্তিগত কূটনীতিকে গুরুত্ব দেন—যদি এই বছর দেখা করেন, তবে এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সাম্প্রতিক গতিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। জুলাইয়ে ব্রিকস, নভেম্বরে জি-২০ এবং এই বছরের শেষের দিকে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে তাদের সুযোগ থাকবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো চীনা বিনিয়োগ, যা উৎপাদন থেকে শুরু করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ মূলধন আনবে এবং চীনের সঙ্গে ভারতের ৮৫ বিলিয়ন ডলার (৬৫.৭ বিলিয়ন পাউন্ড) বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সাহায্য করবে।
এ ধরনের বিনিয়োগ বৃদ্ধি ভারতকে সময়োপযোগী অর্থনৈতিক উৎসাহ দেবে এবং চীনকে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতিতে আরও প্রবেশাধিকার দেবে। শক্তিশালী বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃহত্তর উত্তেজনা কমিয়ে রাখার জন্য আরও প্রণোদনা জোগাবে।
আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক উন্নয়নও দেখার মতো। ভারতের চার প্রতিবেশী—বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কায়—সম্প্রতি নতুন নেতা ক্ষমতায় এসেছেন, যারা তাদের পূর্বসূরিদের চেয়ে চীনের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল। তবে এখন পর্যন্ত, তারা বেইজিং এবং দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে, চীনের সঙ্গে জোট বাঁধার নয়।
যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে ভারতের প্রতিবেশী অঞ্চলে বেইজিংয়ের প্রভাব নিয়ে দিল্লির উদ্বেগ কিছুটা কমতে পারে। এ ছাড়া, যদি চীন ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাশিয়ার সঙ্গে তাদের ক্রমবর্ধমান অংশীদারত্ব থেকে সরে আসে—ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ হলে এটি একটি সম্ভাব্য ফলাফল, যা মস্কোর বেইজিংয়ের ওপর নির্ভরতা গভীর করেছে—তবে এটি ভারত-চীন সম্পর্ককে সাহায্য করতে পারে।
ট্রাম্প ফ্যাক্টরও বড়ভাবে দৃশ্যমান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, চীনের ওপর শুল্ক আরোপ করা সত্ত্বেও বেইজিংয়ের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। যদি তিনি তা করেন এবং দিল্লি যদি আশঙ্কা করে যে, ওয়াশিংটন ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে সাহায্য করার জন্য ততটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নাও হতে পারে, তবে ভারত চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও ভালো জায়গায় নিশ্চিত করতে চাইবে।
অধিকন্তু, যদি ট্রাম্পের আসন্ন পারস্পরিক শুল্ক নীতি ভারতে কঠিন আঘাত হানে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে ১০ শতাংশ গড় শুল্কের পার্থক্য বেইজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্যিক সহযোগিতা জোরদার করার জন্য ভারতের আরও একটি বড় কারণ।
ভারত এবং চীন এশিয়ার দুটি বৃহত্তম দেশ এবং উভয়ই নিজেদের গর্বিত সভ্যতার রাষ্ট্র হিসেবে দেখে। তারা স্বাভাবিক প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে সম্পর্কের সাম্প্রতিক ইতিবাচক উন্নয়ন, অন্যান্য ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় অগ্রগতির সম্ভাবনাসহ, সম্পর্কের মধ্যে আরও স্থিতিশীলতা আনতে পারে এবং নিশ্চিত করতে পারে যে, মোদির আপসমূলক ভাষা নিছক বাগাড়ম্বর নয়।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক আব্দুর রহমান
সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে তাঁর দেশের সম্পর্ক নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, বিতর্কিত ভারত-চীন সীমান্তে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে এবং তিনি দুই দেশের মধ্যে আরও দৃঢ় সম্পর্কের আহ্বান জানিয়েছেন।
মোদির এই মন্তব্য উল্লেখযোগ্য। কারণ, ২০২০ সালে উত্তর লাদাখে (গালওয়ান সীমান্ত) এক ভয়াবহ সীমান্ত সংঘর্ষের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। এই উত্তেজনা এতটাই বেশি ছিল যে,১৯৬২ সালে দুই দেশের মধ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিল, তার পর সবচেয়ে মারাত্মক।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং মোদির বক্তব্যের প্রশংসা করে ঘোষণা করেছেন, ‘দুই দেশের উচিত এমন অংশীদার হওয়া, যারা একে অপরের সাফল্যে অবদান রাখবে।’
অবশ্য, মোদির ঘনিষ্ঠ অংশীদারত্বের আহ্বান সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতির পরিপ্রেক্ষিতে ততটা বড় উল্লম্ফন নয়, যতটা মনে করা হতে পারে। তবে সম্পর্ক এখনো চাপা উত্তেজনাপূর্ণ এবং সত্যিকারের পুনর্মিলনের জন্য দ্বিপক্ষীয়ভাবে এবং বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিকভাবে অনেক কিছুকে সঠিক পথে আগাতে হবে।
ভারত-চীন সম্পর্কের অনেক উজ্জ্বল দিক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী। এমনকি লাদাখ সংঘর্ষের পরেও চীন ভারতের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার ছিল। প্রধান উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট ব্রিকস থেকে শুরু করে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) পর্যন্ত দুই দেশ বহুপক্ষীয়ভাবে সহযোগিতা করে আসছে। তারা অ-পশ্চিমা অর্থনৈতিক মডেল এগিয়ে নেওয়া, ইসলামি সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘নৈতিক ক্রুসেড’ প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে দুই দেশ একই মনোভাব পোষণ করে।
লাদাখের সংঘর্ষের পর দুই দেশের সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এলেও, দুই দেশের সামরিক বাহিনী উচ্চ-পর্যায়ের সংলাপ চালিয়ে গেছে, যার ফলে অক্টোবরে সীমান্ত টহল পুনরায় শুরুর একটি চুক্তি হয়। মোদি সেই মাসে রাশিয়ার ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁরা আরও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। জানুয়ারিতে দুই পক্ষ সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় শুরু করতে সম্মত হয়।
তবুও, সম্পর্কে সমস্যা রয়েই গেছে। উভয় দেশের অন্য দেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা সম্পর্ক আছে—ভারতের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এবং চীনের পাকিস্তানের সঙ্গে। চীন কাশ্মীর অঞ্চলে ভারতীয় নীতির বিরোধিতা করে। বেইজিং পারমাণবিক সরবরাহকারী গোষ্ঠীর মতো প্রভাবশালী গোষ্ঠীতে এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ লাভে বাধা দিয়ে ভারতের শক্তিধর হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে হতাশ করে।
চীনের বিশাল নৌবাহিনী আছে এবং ভারতের বৃহত্তর সামুদ্রিক অঞ্চলে বেইজিংয়ে একমাত্র বিদেশি সামরিক ঘাঁটি আছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নামের সংযোগ করিডরের মাধ্যমে বেইজিং ভারতের প্রতিবেশী অঞ্চলে তার পদচিহ্ন রেখেছে। এই বিষয়টিকে দিল্লি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ, এই প্রকল্প ভারতের নিজস্ব প্রভাব বলয় বলে পরিচিত অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গেছে।
এদিকে, ভারত তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করছে। অথচ, চীন তাইওয়ানকে তার অংশ এবং বিদ্রোহী প্রদেশ হিসেবে দেখে। দিল্লি তিব্বতের নির্বাসিত নেতা দালাই লামার আশ্রয়দাতা। বেইজিং তাঁকে বিপজ্জনক বিচ্ছিন্নতাবাদী মনে করে। ভারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির আলোচনা করছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা উসকানি ঠেকাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। ভারত যে সব বৈশ্বিক ফোরামের সদস্য—যেমন কোয়াড, মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর—চীন সেগুলোকে তার বিরুদ্ধে প্রচেষ্টা হিসেবে দেখে।
এই দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গতিপথের বিষয়ে ভালো ধারণা পেতে বেশ কয়েকটি লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা দরকার। একটি হলো সীমান্ত আলোচনা। ২ হাজার ১০০ মাইল বা ৩ হাজার ৩৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের পঞ্চাশ হাজার বর্গমাইল অঞ্চল—বাংলাদেশের আয়তনের চেয়ে সামান্য কম—এখনো বিতর্কিত।
সীমান্তের পরিস্থিতি সম্পর্কের সবচেয়ে বড় মাপকাঠি। লাদাখ সংঘর্ষ দুই দেশের মধ্যকার আস্থা-বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে; গত বছরের টহল চুক্তি তা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করেছে। যদি দুই পক্ষ আরও আস্থা বৃদ্ধিমূলক পদক্ষেপ তৈরি করতে পারে, তবে এটি সম্পর্কের জন্য শুভ হবে।
ভবিষ্যতের উচ্চ-পর্যায়ের সম্পৃক্ততাও গুরুত্বপূর্ণ। মোদি এবং সি—যারা ব্যক্তিগত কূটনীতিকে গুরুত্ব দেন—যদি এই বছর দেখা করেন, তবে এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সাম্প্রতিক গতিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। জুলাইয়ে ব্রিকস, নভেম্বরে জি-২০ এবং এই বছরের শেষের দিকে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে তাদের সুযোগ থাকবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো চীনা বিনিয়োগ, যা উৎপাদন থেকে শুরু করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ মূলধন আনবে এবং চীনের সঙ্গে ভারতের ৮৫ বিলিয়ন ডলার (৬৫.৭ বিলিয়ন পাউন্ড) বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সাহায্য করবে।
এ ধরনের বিনিয়োগ বৃদ্ধি ভারতকে সময়োপযোগী অর্থনৈতিক উৎসাহ দেবে এবং চীনকে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতিতে আরও প্রবেশাধিকার দেবে। শক্তিশালী বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃহত্তর উত্তেজনা কমিয়ে রাখার জন্য আরও প্রণোদনা জোগাবে।
আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক উন্নয়নও দেখার মতো। ভারতের চার প্রতিবেশী—বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কায়—সম্প্রতি নতুন নেতা ক্ষমতায় এসেছেন, যারা তাদের পূর্বসূরিদের চেয়ে চীনের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল। তবে এখন পর্যন্ত, তারা বেইজিং এবং দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে, চীনের সঙ্গে জোট বাঁধার নয়।
যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে ভারতের প্রতিবেশী অঞ্চলে বেইজিংয়ের প্রভাব নিয়ে দিল্লির উদ্বেগ কিছুটা কমতে পারে। এ ছাড়া, যদি চীন ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাশিয়ার সঙ্গে তাদের ক্রমবর্ধমান অংশীদারত্ব থেকে সরে আসে—ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ হলে এটি একটি সম্ভাব্য ফলাফল, যা মস্কোর বেইজিংয়ের ওপর নির্ভরতা গভীর করেছে—তবে এটি ভারত-চীন সম্পর্ককে সাহায্য করতে পারে।
ট্রাম্প ফ্যাক্টরও বড়ভাবে দৃশ্যমান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, চীনের ওপর শুল্ক আরোপ করা সত্ত্বেও বেইজিংয়ের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। যদি তিনি তা করেন এবং দিল্লি যদি আশঙ্কা করে যে, ওয়াশিংটন ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে সাহায্য করার জন্য ততটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নাও হতে পারে, তবে ভারত চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও ভালো জায়গায় নিশ্চিত করতে চাইবে।
অধিকন্তু, যদি ট্রাম্পের আসন্ন পারস্পরিক শুল্ক নীতি ভারতে কঠিন আঘাত হানে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে ১০ শতাংশ গড় শুল্কের পার্থক্য বেইজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্যিক সহযোগিতা জোরদার করার জন্য ভারতের আরও একটি বড় কারণ।
ভারত এবং চীন এশিয়ার দুটি বৃহত্তম দেশ এবং উভয়ই নিজেদের গর্বিত সভ্যতার রাষ্ট্র হিসেবে দেখে। তারা স্বাভাবিক প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে সম্পর্কের সাম্প্রতিক ইতিবাচক উন্নয়ন, অন্যান্য ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় অগ্রগতির সম্ভাবনাসহ, সম্পর্কের মধ্যে আরও স্থিতিশীলতা আনতে পারে এবং নিশ্চিত করতে পারে যে, মোদির আপসমূলক ভাষা নিছক বাগাড়ম্বর নয়।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক আব্দুর রহমান
ভোটারের ন্যূনতম বয়স নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের সংস্কার প্রস্তাবে ভোটারের ন্যূনতম বয়স ১৬ বছর করার প্রস্তাব করেছে। আবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৭ বছরের প্রস্তাব করেছেন। যদিও রাজনৈতিক দলগুলো এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আসছে।
৪ দিন আগেআগামী ২৮ এপ্রিল আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা। সংক্ষিপ্ত এই সময়ের মধ্যেই দেশটিতে শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনী প্রচারণা। এবারের নির্বাচন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছে তার বৃহত্তম অর্থনৈতিক অংশীদার ও প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্র।
৫ দিন আগেসাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য বা মিথ্যা তথ্যের বিস্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষকেরা আগে গণমাধ্যম–কেন্দ্রিক ভুল তথ্য বা গুজবের ওপর গুরুত্ব দিলেও, এখন রাজনৈতিক নেতা এবং দলের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
৫ দিন আগেমসজিদ নির্মাণে সৌদি আরবের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বেশ আলোচনায় আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোর তরুণ প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম ত্রাওরে। এমনকি বাংলাদেশেও তিনি এখন পরিচিত হয়ে উঠেছেন। অনেকে তাঁর এই অবস্থানকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন।
৬ দিন আগে