ব্লুমবার্গের বিশ্লেষণ
অনলাইন ডেস্ক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন গতকাল বুধবার রাতে। তাঁর আরোপ করা এই শুল্ক বাংলাদেশ–কম্বোডিয়াসহ বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করতে পারে। এসব দেশে শ্রমঘন রপ্তানি শিল্পকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের কাছ থেকে শুল্কের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র যে বৃহৎ অর্থনৈতিক সুবিধা পায়, নতুন করে সবার ওপর শুল্ক আরোপ করায় তা কমে যেতে পারে।
বুধবার ট্রাম্প এশিয়ার দেশগুলোর ওপর যে শুল্ক আরোপ করেছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আরোপ করা হয়েছে কম্বোডিয়ার ওপর। দেশটির ওপর ট্রাম্প ৪৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। অন্যতম শীর্ষ পোশাক উৎপাদনকারী দেশ বাংলাদেশ ৩৭ শতাংশ, লাওস ৪৮ শতাংশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ লেসোথো ৫০ শতাংশ শুল্কের কবলে পড়েছে। গত সপ্তাহে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৩ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ও বিপর্যস্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে নিপতিত মিয়ানমারে ৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
শুল্ক আরোপের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের পর হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে কম্বোডিয়ার শুল্কের দিকে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প বলেন, ‘ওহ, কম্বোডিয়ার দিকে তাকান, ৯৭ শতাংশ!’ এ সময় তিনি হেসে একপ্রকার গড়িয়েই পড়েন যেন! তিনি বলেন, ‘তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করে প্রচুর টাকা কামিয়েছে।’
যদিও বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একজন কম্বোডিয়ান দৈনিক গড়ে প্রায় ৬ দশমিক ৬৫ ডলার আয় করে, যা বৈশ্বিক মাথাপিছু গড় আয়ের পাঁচ ভাগের এক ভাগেরও কম।
যুক্তরাষ্ট্র যখন বেশ কয়েকটি দেশে সহায়তা বন্ধ করেছে, ঠিক সেই সময়ে এই বাণিজ্য পদক্ষেপ বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোকে আরও অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন কয়েক হাজার গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা চুক্তি বাতিল করেছে, যা কয়েক দশক ধরে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরিচিতি তৈরি করেছিল। মিয়ানমারে ইতিমধ্যে সহায়তা বন্ধের প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। চীনের মতো দেশগুলো দ্রুত সেই শূন্যস্থান পূরণ করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এশিয়াকেন্দ্রিক টেকসই উন্নয়ন ও বাণিজ্য সহায়তা নিয়ে কাজ করা হাইনরিখ ফাউন্ডেশনের বাণিজ্যনীতি বিষয়ক প্রধান ডেবোরা এলমস বলেন, ‘এটি এক বিপর্যয়। রাতারাতি প্রায় ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়টি সামাল দেওয়া অসম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘ওই (যাদের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে) দেশগুলোর মধ্যে অনেক দেশই স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা ভোগ করত।’ তিনি আরও বলেন, ‘চীনের মতো দুর্বল বাজারের পরিবর্তে দেশগুলো ইউরোপ, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার বাজারের দিকে ঝুঁকতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪ সালের মার্কিন আদমশুমারি অধিদপ্তরের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে একটি সূত্রের মাধ্যমে এই শুল্ক হার হিসাব করেছে। সূত্রটির সরল রূপ হলো, কোনো দেশের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্তকে সেই দেশটির যুক্তরাষ্ট্রে মোট রপ্তানি দিয়ে ভাগ করা এবং ফলাফলকে দুই দিয়ে ভাগ করে শুল্কের হার বের করা।
এই পদ্ধতির কারণে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম মাদাগাস্কার ৪৭ শতাংশ শুল্কের শিকার হয়েছে। দরিদ্র লাওসের ওপর এই আঘাত এসেছে, যেখানে গড়পড়তা মানুষ দৈনিক ৬ ডলারের কম আয় করে।
এই পদক্ষেপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকার বাণিজ্যনীতির একটি বড় পরিবর্তন, যেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য করা এবং বিদেশে ওয়াশিংটনের স্বার্থ এগিয়ে নেওয়ার জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে উৎসাহিত করা হতো।
২০০০ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন আফ্রিকান গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে আফ্রিকার সাব–সাহারা অঞ্চলের দেশগুলোকে ১ হাজার ৮০০ টিরও বেশি পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছিলেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০৪ সালে এটিকে সম্প্রসারিত করেন এবং এমন সব উদ্যোগ চালু করেন যা দেশগুলোকে তাদের পণ্য মার্কিন ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে সহায়তা করে।
চীনের উত্থান এশিয়ার অনেক দেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তাদের অর্থনৈতিক নির্ভরতাকে পর্যালোচনা করতে উৎসাহিত করেছে। অনেক দেশ অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ও অর্থায়নের আশায় বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এতে অনেক ছোট দেশ পক্ষ বেছে নিতে গিয়ে চাপের মুখে পড়েছে।
কম্বোডিয়ার দুটি বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু দেশটি ইতিমধ্যে বেইজিংয়ের দিকে ঝুঁকেছে, যা এখন দেশটির বৃহত্তম বৈদেশিক বিনিয়োগের উৎস।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্র–কম্বোডিয়ার মধ্যকার মোট ১৩ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের বেশির ভাগ অংশ ছিল কম্বোডিয়ায় তৈরি পোশাক ও জুতার মতো শিল্পজাত পণ্য।
পোশাক রপ্তানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর ব্যাপকভাবেই নির্ভরশীল বাংলাদেশ। দেশটির সরকার জানিয়েছে, তারা তাদের বাণিজ্য সুবিধা ধরে রাখার জন্য শুল্ক কমানোর উপায় খুঁজছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক পর্যালোচনা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দ্রুততার সঙ্গে শুল্ক যৌক্তিক করার বিকল্পগুলো চিহ্নিত করছে, যা এই বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয়।’
এদিকে বিশ্লেষকেরা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক গণনা পদ্ধতির ‘ন্যায্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ, এর ফলে দরিদ্রতম দেশগুলোর ওপর বাড়াবাড়ি রকমের প্রভাব পড়বে। এ বিষয়ে থিংক ট্যাংক ওভারসিজ-চাইনিজ ব্যাংকিং করপোরেশনের এশিয়া ম্যাক্রো রিসার্চের প্রধান টমি শিয়ে ব্লুমবার্গকে বলেছেন, ‘এই সূত্র কার্যকরভাবে সেই দেশগুলোকে শাস্তি দেয়, যারা তাদের পণ্যের নিট ক্রেতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।’
শিয়ে আরও বলেছেন, ‘বিশেষ করে এই শুল্ক নির্ণয় পদ্ধতি কম্বোডিয়ার মতো ছোট উন্নয়নশীল দেশগুলোকে শাস্তি দেয়, যাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি কিছু কেনার সক্ষমতা নেই।’
কম্বোডিয়ার সরকারি মুখপাত্র পেন বোনা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে ব্লুমবার্গকে জানান, তিনি এখনো এই শুল্কের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না। বিষয়টি পর্যালোচনা করছে তাঁর দেশের সরকার।
উচ্চ মার্কিন শুল্কের কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যে ওলটপালট হবে তাতে, এশিয়ার দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ বাজার সস্তা চীনা পণ্যে সয়লাব হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। চীনের ওপরও ৩৪ শতাংশ হারে শুল্ক ধার্য করা হয়েছে, যা এ বছর ট্রাম্প আরোপিত আগের ২০ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে যোগ হবে।
হাইনরিখ ফাউন্ডেশনের এলমস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আগে থেকেই যেসব পণ্যের রপ্তানি হয়, চীনকে এখন সেগুলোর জন্য নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে, অন্তত স্বল্প মেয়াদে হলেও।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি প্রতিবেশীদের সঙ্গে নতুন উত্তেজনা তৈরি করবে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ–সম্পাদক আব্দুর রহমান
আরও খবর পড়ুন:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন গতকাল বুধবার রাতে। তাঁর আরোপ করা এই শুল্ক বাংলাদেশ–কম্বোডিয়াসহ বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করতে পারে। এসব দেশে শ্রমঘন রপ্তানি শিল্পকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের কাছ থেকে শুল্কের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র যে বৃহৎ অর্থনৈতিক সুবিধা পায়, নতুন করে সবার ওপর শুল্ক আরোপ করায় তা কমে যেতে পারে।
বুধবার ট্রাম্প এশিয়ার দেশগুলোর ওপর যে শুল্ক আরোপ করেছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আরোপ করা হয়েছে কম্বোডিয়ার ওপর। দেশটির ওপর ট্রাম্প ৪৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। অন্যতম শীর্ষ পোশাক উৎপাদনকারী দেশ বাংলাদেশ ৩৭ শতাংশ, লাওস ৪৮ শতাংশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ লেসোথো ৫০ শতাংশ শুল্কের কবলে পড়েছে। গত সপ্তাহে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৩ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ও বিপর্যস্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে নিপতিত মিয়ানমারে ৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
শুল্ক আরোপের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের পর হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে কম্বোডিয়ার শুল্কের দিকে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প বলেন, ‘ওহ, কম্বোডিয়ার দিকে তাকান, ৯৭ শতাংশ!’ এ সময় তিনি হেসে একপ্রকার গড়িয়েই পড়েন যেন! তিনি বলেন, ‘তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করে প্রচুর টাকা কামিয়েছে।’
যদিও বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একজন কম্বোডিয়ান দৈনিক গড়ে প্রায় ৬ দশমিক ৬৫ ডলার আয় করে, যা বৈশ্বিক মাথাপিছু গড় আয়ের পাঁচ ভাগের এক ভাগেরও কম।
যুক্তরাষ্ট্র যখন বেশ কয়েকটি দেশে সহায়তা বন্ধ করেছে, ঠিক সেই সময়ে এই বাণিজ্য পদক্ষেপ বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোকে আরও অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন কয়েক হাজার গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা চুক্তি বাতিল করেছে, যা কয়েক দশক ধরে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরিচিতি তৈরি করেছিল। মিয়ানমারে ইতিমধ্যে সহায়তা বন্ধের প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। চীনের মতো দেশগুলো দ্রুত সেই শূন্যস্থান পূরণ করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এশিয়াকেন্দ্রিক টেকসই উন্নয়ন ও বাণিজ্য সহায়তা নিয়ে কাজ করা হাইনরিখ ফাউন্ডেশনের বাণিজ্যনীতি বিষয়ক প্রধান ডেবোরা এলমস বলেন, ‘এটি এক বিপর্যয়। রাতারাতি প্রায় ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়টি সামাল দেওয়া অসম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘ওই (যাদের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে) দেশগুলোর মধ্যে অনেক দেশই স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা ভোগ করত।’ তিনি আরও বলেন, ‘চীনের মতো দুর্বল বাজারের পরিবর্তে দেশগুলো ইউরোপ, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার বাজারের দিকে ঝুঁকতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪ সালের মার্কিন আদমশুমারি অধিদপ্তরের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে একটি সূত্রের মাধ্যমে এই শুল্ক হার হিসাব করেছে। সূত্রটির সরল রূপ হলো, কোনো দেশের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্তকে সেই দেশটির যুক্তরাষ্ট্রে মোট রপ্তানি দিয়ে ভাগ করা এবং ফলাফলকে দুই দিয়ে ভাগ করে শুল্কের হার বের করা।
এই পদ্ধতির কারণে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম মাদাগাস্কার ৪৭ শতাংশ শুল্কের শিকার হয়েছে। দরিদ্র লাওসের ওপর এই আঘাত এসেছে, যেখানে গড়পড়তা মানুষ দৈনিক ৬ ডলারের কম আয় করে।
এই পদক্ষেপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকার বাণিজ্যনীতির একটি বড় পরিবর্তন, যেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য করা এবং বিদেশে ওয়াশিংটনের স্বার্থ এগিয়ে নেওয়ার জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে উৎসাহিত করা হতো।
২০০০ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন আফ্রিকান গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে আফ্রিকার সাব–সাহারা অঞ্চলের দেশগুলোকে ১ হাজার ৮০০ টিরও বেশি পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছিলেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০৪ সালে এটিকে সম্প্রসারিত করেন এবং এমন সব উদ্যোগ চালু করেন যা দেশগুলোকে তাদের পণ্য মার্কিন ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে সহায়তা করে।
চীনের উত্থান এশিয়ার অনেক দেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তাদের অর্থনৈতিক নির্ভরতাকে পর্যালোচনা করতে উৎসাহিত করেছে। অনেক দেশ অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ও অর্থায়নের আশায় বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এতে অনেক ছোট দেশ পক্ষ বেছে নিতে গিয়ে চাপের মুখে পড়েছে।
কম্বোডিয়ার দুটি বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু দেশটি ইতিমধ্যে বেইজিংয়ের দিকে ঝুঁকেছে, যা এখন দেশটির বৃহত্তম বৈদেশিক বিনিয়োগের উৎস।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্র–কম্বোডিয়ার মধ্যকার মোট ১৩ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের বেশির ভাগ অংশ ছিল কম্বোডিয়ায় তৈরি পোশাক ও জুতার মতো শিল্পজাত পণ্য।
পোশাক রপ্তানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর ব্যাপকভাবেই নির্ভরশীল বাংলাদেশ। দেশটির সরকার জানিয়েছে, তারা তাদের বাণিজ্য সুবিধা ধরে রাখার জন্য শুল্ক কমানোর উপায় খুঁজছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক পর্যালোচনা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দ্রুততার সঙ্গে শুল্ক যৌক্তিক করার বিকল্পগুলো চিহ্নিত করছে, যা এই বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয়।’
এদিকে বিশ্লেষকেরা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক গণনা পদ্ধতির ‘ন্যায্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ, এর ফলে দরিদ্রতম দেশগুলোর ওপর বাড়াবাড়ি রকমের প্রভাব পড়বে। এ বিষয়ে থিংক ট্যাংক ওভারসিজ-চাইনিজ ব্যাংকিং করপোরেশনের এশিয়া ম্যাক্রো রিসার্চের প্রধান টমি শিয়ে ব্লুমবার্গকে বলেছেন, ‘এই সূত্র কার্যকরভাবে সেই দেশগুলোকে শাস্তি দেয়, যারা তাদের পণ্যের নিট ক্রেতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।’
শিয়ে আরও বলেছেন, ‘বিশেষ করে এই শুল্ক নির্ণয় পদ্ধতি কম্বোডিয়ার মতো ছোট উন্নয়নশীল দেশগুলোকে শাস্তি দেয়, যাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি কিছু কেনার সক্ষমতা নেই।’
কম্বোডিয়ার সরকারি মুখপাত্র পেন বোনা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে ব্লুমবার্গকে জানান, তিনি এখনো এই শুল্কের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না। বিষয়টি পর্যালোচনা করছে তাঁর দেশের সরকার।
উচ্চ মার্কিন শুল্কের কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যে ওলটপালট হবে তাতে, এশিয়ার দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ বাজার সস্তা চীনা পণ্যে সয়লাব হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। চীনের ওপরও ৩৪ শতাংশ হারে শুল্ক ধার্য করা হয়েছে, যা এ বছর ট্রাম্প আরোপিত আগের ২০ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে যোগ হবে।
হাইনরিখ ফাউন্ডেশনের এলমস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আগে থেকেই যেসব পণ্যের রপ্তানি হয়, চীনকে এখন সেগুলোর জন্য নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে, অন্তত স্বল্প মেয়াদে হলেও।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি প্রতিবেশীদের সঙ্গে নতুন উত্তেজনা তৈরি করবে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ–সম্পাদক আব্দুর রহমান
আরও খবর পড়ুন:
বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার মতো ছোট দেশগুলোকে অর্থনৈতিক সমন্বয়ে জোর দিতে দেখা যাচ্ছে। অর্থনৈতিক সমন্বয় বলতে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় অর্থনীতিতে পরিবর্তন বা সমন্বয় আনার চেষ্টাকে বোঝানো হচ্ছে।
১ দিন আগেআরব দেশগুলোর ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে আপাত-নীরবতা একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক বিষয়। এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কৌশলগত এবং ঐতিহাসিক কারণ। স্বাধীন ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের দাবি এবং বাসিন্দাদের ওপর এই দীর্ঘ নিপীড়ন নিয়ে যে আরব দেশগুলো কিছুই করছে না, বা নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকছে—এই ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়।
২ দিন আগেপ্রবাদ আছে, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। চলুন দেখি, এই দুই রাজার যুদ্ধে কার প্রাণ যায়! ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্কের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজ দেশে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। চীন থেকে আমদানি করা সব পণ্যে ইতিমধ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক আর
৩ দিন আগেদখলকৃত অর্থনীতিতে প্রতিভা এবং সাফল্যের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন হয়। রাজনৈতিক যোগাযোগ নেই এমন দক্ষ কর্মীরা দেশ ছেড়ে চলে যান এবং সক্ষম সংস্থাগুলো দেউলিয়া হয়ে যায়। অন্যদিকে, ভালো যোগাযোগ আছে এমন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ভাবন বা মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করা ছাড়াই (বা কখনো কখনো পণ্য সরবরাহ না করেও)
৩ দিন আগে