শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা কৃষি ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে র্যাব পরিচয়ে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারকে মারধর করে ৩ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়াসহ ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় জাজিরা থানায় অভিযোগ হয়েছে। অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল আমিন।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে জাজিরা উপজেলার পালেরচর বাজারসংলগ্ন পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধের কাজ করছে মেসার্স আমির ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন রবিউল ইসলাম জাকির।
গত ৩১ ডিসেম্বর বিকেল ৫টার দিকে একটি প্রাইভেট কার নিয়ে সেখানে হাজির হন কৃষি ব্যাংক জাজিরা শাখার ব্যবস্থাপক আনিসুর রহমান ও উপজেলার কাজীরহাট এলাকার বাসিন্দা জালাল ব্যাপারীর ছেলে মিলন ব্যাপারীসহ অজ্ঞাত আরও দুজন। তাঁরা সেখানে গিয়ে নিজেদের র্যাব পরিচয় দিয়ে রবিউলের কাজের বৈধতার কাগজপত্র দেখতে চান। এ সময় রবিউল তাঁদের কাগজপত্র দেখান।
কাগজপত্র ভুয়া দাবি করে তাঁরা রবিউলের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। এ সময় প্রতিবাদ করায় তাঁরা ম্যানেজার রবিউলকে মারধর করে ব্যাগে থাকা ৩ লাখ ৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন। পরে রবিউলকে প্রাইভেট কারে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন বাজারের ব্যবসায়ীরা রবিউলকে নিয়ে যেতে বাধা দেন। বাধা পেয়ে তাঁরা সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে দ্রুত চলে যান।
এ ঘটনায় গত বুধবার (১ জানুয়ারি) রবিউল ইসলাম জাকির বাদী হয়ে কৃষি ব্যাংক জাজিরা শাখার ব্যবস্থাপক আনিসুর রহমান ও মিলন ব্যাপারীসহ অজ্ঞাতনামা আরও দুজনকে অভিযুক্ত করে জাজিরা থানায় অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম জাকির বলেন, ‘গত মঙ্গলবার আমি প্রতিদিনের মতো পালেরচর এলাকায় প্রকল্পের কাজের তদারকি করছিলাম। বিকেলে হঠাৎ প্রাইভেট কার নিয়ে তিন-চারজন লোক আসেন। তাঁরা নিজেদের র্যাব পরিচয় দিয়ে আমার কাছে কাজের কাগজপত্র দেখতে চান। আমি তাঁদের কাগজপত্র দেখানোর সাথে সাথে ব্যাংক ম্যানেজার আনিসুর রহমান আমাকে গালিগালাজ শুরু করেন এবং আমার শার্টের কলার চেপে ধরে টানতে থাকেন। বাকিরা আমাকে মারধর করতে থাকেন। এ সময় আমার কাছে ব্যাগে থাকা ৩ লাখ ৭ হাজার টাকাসহ ব্যাগটি তাঁরা কেড়ে নেন। পরে তাঁরা আমাকে তাঁদের গাড়িতে ওঠানোর চেষ্টা করেন। এ সময় স্থানীয়রা আমাকে ছাড়িয়ে রাখে। পরে এ ঘটনা আমার মালিককে জানাই এবং থানায় অভিযোগ দায়ের করি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
পালেরচর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আব্দুর রব মাদবর বলেন, ‘আমি হঠাৎ দেখতে পাই ঠিকাদারের ম্যানেজার রবিউলকে কয়েকজন মিলে টেনে নিয়ে গাড়িতে ওঠানোর চেষ্টা করছে। তখন আমি এলাকাবাসীদের নিয়ে তাঁকে উদ্ধার করি।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমি অফিস শেষে বিকেলে পালেরচরে ঘুরতে গিয়ে দেখতে পাই, নদীর পাড় থেকে চার-পাঁচটি ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে তুলে দেওয়া হচ্ছে। তখন সেখানে দায়িত্বে থাকা একজনের কাছে আমি জানার চেষ্টা করি নদীর পাড় থেকে কারা মাটি কেটে নিচ্ছে, তাদের কোনো বৈধতা আছে কি না। মূলত আমি মাটি-বালু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলাম। তখন মাটি কাটার বিষয়টি আমি ফোনে এডিসি রেভিনিউকে (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, রাজস্ব) জানাই। তিনি আমার নম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) দিলে ইউএনও আমাকে ফোন দিয়ে জানান, তারা সেখানে মোবাইল কোট করেছেন। এখন শুনি তারা আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে।’
জাজিরা উপজেলা ইউএনও কাবেরী রায় বলেন, ‘ব্যাংক কর্মকর্তা আনিছুর রহমান আমাকে জানিয়েছিলেন একটি চক্র নদীর পাড় থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আমি তাকে বলেছি, সেখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। প্রয়োজনে আবারও মোবাইল কোর্ট চালানো হবে।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমির ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী আমির হোসেন বলেন, ‘আমার ম্যানেজারকে অন্যায়ভাবে মারধর করে তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ হয়েছে। আশা করছি, ন্যায়বিচার পাব।’
শরীয়তপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ তারেক হাসান বলেন, ‘ঘটনা সম্পর্কে আমি শুনেছি। এ বিষয়ে যেহেতু থানায় অভিযোগ হয়েছে, বিষয়টি এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখবে।’
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল আমিন বলেন, ‘কৃষি ব্যাংক জাজিরা শাখার ব্যবস্থাপক আনিছুর রহমানসহ দুই-তিনজনের নামে একটি চাঁদাবাজির লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’