‘দাম কম থাকায় এ বছর পাট চাষের খরচ উঠছে না। লাভ বলতে শুধু জ্বালানি হিসেবে পাটখড়ি। পাট চাষে এবার বিঘাপ্রতি ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। খরার কারণে ফলনও হয়েছে কম, বিঘায় ১১-১২ মণ। কিছু পাট বিক্রি করেছি। দাম পেয়েছি ১৬ শ টাকা মণ। তাতে লোকসান হয়েছে। ভবিষ্যতে আর কোনো দিন পাট চাষ করব না।’ কথাগুলো বলেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের পাটচাষি আলী হোসেন।
নির্মাণাধীন তিন কামরার পাকা বাড়িটির ওপরে ছাদের কাজ সেরে তার নিচে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন বর্গাচাষি আবু কালাম। কামরাগুলোতে পাট রাখায় নিজেদের থাকতে সমস্যা হচ্ছে। বসবাসে সমস্যা হলেও পাট বিক্রি করতে পারছেন না তিনি। বর্তমান দামে পাট বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে তাঁকে।
আবু কালাম যশোরের ঝিকরগাছার বোধখানা গ্রামের দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা। এ বছর পাঁচ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে তিনি পাটের চাষ করেছেন। পাট শুকিয়ে মাসখানেক ধরে দাম বাড়ার আশায় বাড়িতে মজুত রেখেছেন।
দাম কম থাকায় সোনালি আঁশ বলে খ্যাত পাট এ বছর কৃষকের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি মৌসুমে অনাবৃষ্টিতে পাটের ফলন তেমন ভালো হয়নি। তারপর দাম কম থাকায় উৎপাদন খরচও উঠছে না কৃষকের। দাম কম থাকায় পাট ব্যবসায়ীদেরও লোকসান গুনতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এ উপজেলায় ৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়।
আজ শুক্রবার আবু কালামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘এ বছর পাঁচ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে লাল জাতের পাট চাষ করেছিলাম। অনাবৃষ্টির কারণে এ পাট চাষে খরচ বেশি হয়েছে। পরিচর্যা, বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, জাগ দেওয়া, ধোয়া, পরিবহন সবকিছু মিলিয়ে খরচ অনেক বেশি। পাঁচ বিঘা জমিতে লাখ টাকার ওপরে খরচ হয়েছে। ফলন পেয়েছি ৬০ মণ। দুই দিন আগে ব্যাপারী সাড়ে ১৫ শ টাকা মণ দাম বলে গেছেন। তাতে বিঘায় লোকসান হবে প্রায় ১০ হাজার টাকা। পাট না পারছি বেচতে, না পারছি ঘরে রাখতে। এখন পাট আমার গলার ফাঁস হয়েছে।’
একই গ্রামের মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর বাঁওড় ইজারাদার পাট জাগ দিতে না দেওয়ায় দূরে নিয়ে যেতে হয়েছে। তারপর দাম না থাকায় সাড়ে চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করে ৩০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।’
ঝিকরগাছা বাজারে পাটের মান ও রং ভেদে মণপ্রতি বর্তমান দর ১ হাজার ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা। বাজারের বোটঘাট এলাকার পাট ব্যবসায়ী মো. ইমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে ২১-২২ শ টাকা করে ২০০ মণ পাট কিনেছিলাম। এখন তার দাম সাড়ে ১৬ শ টাকা করে। লাভ তো দূরের কথা, আসল বাঁচাতে পারলে পিঠ বাঁচে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন পলাশ আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ বছর খাল-বিলে পানি না থাকা ও অনাবৃষ্টির কারণে পাট পচানো, সংগ্রহ ও পরিবহন বাবদ খরচ অনেক বেড়েছে। কিন্তু দাম আশানুরূপ না হওয়ায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।