সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তালাক দেওয়া স্ত্রী আবার বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় বিষ পান করে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে মারা গেছেন আতাউর রহমান (৪০) নামে এক ব্যক্তি।
গতকাল বুধবার দুপুরে উপজেলা সদরের লাঙ্গলঝাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আতাউর রহমান সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আইচপাড়া গ্রামের লতিফ সরদারের (মৃত) ছেলে ৷
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আতাউর রহমান সাতক্ষীরা শহরের পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রথম স্ত্রীর গর্ভে তাঁর দুটি সন্তান রয়েছে। এরপর কলারোয়া উপজেলার লাঙ্গলঝাড়া এলাকার তালাকপ্রাপ্ত রুবিনাকে বিয়ে করেন তিনি।
উপজেলার ৪ নম্বর লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমএ কালাম বলেন, ‘জেলা সদরের এক ছেলে বিষপান করে আমার ইউনিয়নে এসে মারা গেছে। শুনেছি, ছেলেটি একাধিক বিয়ে করেছে। আবার পারিবারিক অভাব অনটনের পাশাপাশি সে শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিল। নানা কারণে তাঁদের মনোমালিন্য ছিল। রুবিনা আতাউরের বিয়ের পরে কয়েকবার ছাড়াছাড়ি এবং ফের ঘরবাঁধার ঘটনাও ঘটে। মূলত আতাউরের অসুস্থতার কারণেই বারবার ডিভোর্স হয়। সর্বশেষ আতাউর রহমান তাঁকে আবার বিয়ে করতে চাইলে রুবিনা ও তাঁর পরিবার অমত করে। পরে ছেলেটা বিষ খায়। ছেলেটা কিডনি রোগে ভুগছিল। ভারত থেকে তার অপারেশন করা।’
অনেকে বলছেন, আতাউরের কিডনি বিক্রির টাকা নিয়ে রুবিনা আতাউর রহমানকে ডিভোর্স দিয়েছে। এটা ‘অযৌক্তিক’ বলে মন্তব্য করেছেন চেয়ারম্যান এমএ কালাম।
তবে আতাউরের মা জাহানারা খাতুন বলেন, ‘ছেলে উপজেলার মুরারিকাটি গ্রামের আয়ুব আলীর মেয়ে মমতাজ খাতুনকে প্রথম বিয়ে করে। সেখানে দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে। পরে গোপনে লাঙ্গলঝাড়া গ্রামের শরিফুল ইসলামের মেয়ে রুবিনা খাতুনকে বিয়ে করে। এরপর ভারতে গিয়ে একটি কিডনি বিক্রি করে ৩ লাখ টাকা সংসার খরচের জন্য ছোট স্ত্রী রুবিনাকে দেয়। টাকা পাওয়ার পর রুবিনা আতাউরকে তালাক দিয়ে অন্য ছেলেকে গোপনে বিয়ে করেছে। এই খবর জানার পর বিষ খেয়ে মারা গেছে আতাউর।’
আতাউরের শাশুড়ি রুবিনার মা মর্জিনা খাতুন বলেন, ‘জামাই অন্য স্থান থেকে বিষ খেয়ে বাড়ির উঠানে এসে পড়ে যায়। তাকে কলারোয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’ কিডনি বিক্রির টাকা নেওয়ার বিষয়টি জানা নেই বলে উল্লেখ করেন মর্জিনা খাতুন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কলারোয়া থানার ওসি নাসির উদ্দীন মৃধা বলেন, ‘ছেলেটা লাঙ্গলঝাড়া এলাকার ডিভোর্সি নারী রুবিনাকে বিয়ে করে। এর আগেও বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু তিন মাস আগে রুবিনা ও তাঁর ডিভোর্স হয়। পনেরো দিনের মাথায় আবার তাঁকে বিয়ে করেন। গত ৮ আগস্ট আবার রুবিনাকে ডিভোর্স দেন। গতকাল আবার তাঁকে বিয়ে করতে মেয়ের বাড়িতে যান। তখন মেয়ে বলে, আমি আর বিয়ে করব না। পরে সে ওই বাড়িতে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। মরদেহ পোস্টমর্টেমের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।’
ওসি আরও বলেন, ‘ছেলেটার বাড়ি সাতক্ষীরা শহরে হওয়ায় কিডনি বিক্রি করে সেই টাকা দিয়েছিলেন কি না বিষয়টা আমাদের অজানা। অধিকতর তদন্তে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে বলে।’