‘শনিবার বিকেলে হঠাৎ ফোন দিয়ে সালাম আমাকে বলল, ‘‘ভবনে আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। ধোঁয়ায় কিছু দেখা যাচ্ছে না। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমি মনে হয় আর বাঁচব না। তুই আমার স্ত্রী, সন্তান ও মাকে দেখে রাখিস।’’ এরপর ফোন বন্ধ হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও আর ওর সন্ধান পাইনি। পরদিন রোববার জানতে পারি, ভাই আর নেই।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চর ভবানীপুর গ্রামের মৃত সাবের আলীর ছেলে আলামিন। তাঁর ছোট ভাই মিস্ত্রি আব্দুস সালাম (২৪) নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার চিটাগাং রোড এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় অগ্নিসংযোগে প্রাণ হারিয়েছেন। ঘটনার সময় তিনি প্রিয়ম নিবাস নামের একটি বহুতল ভবনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের শাখায় সাজসজ্জার কাজ করছিলেন। এ ঘটনায় আরও মারা গেছেন একই গ্রামের ওহাব মণ্ডলের ছেলে সেলিম মণ্ডল (২৮) এবং সিলেটের বিয়ানীবাজারের সোহেল আহমেদ (২১)।
সালাম ও সেলিমের লাশ গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভবানীপুর গ্রামে আনা হয়। রাতে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হয়। সালামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আধা পাকা টিনশেড ঘরে বৃদ্ধ মা বুলজান খাতুনকে ঘিরে বসে আছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। আরেকটি কক্ষে শুয়ে আছেন স্ত্রী মারিয়া খাতুন। তিনি অসুস্থ। পাশেই বিছানার ওপর খেলা করছে দেড় বছর বয়সী একমাত্র ছেলে মাহিম।
বিলাপ করতে করতে বুলজান বলেন, ‘আড়াই মাস আগে ওর বাবা মরে গেছে। আমার বেটার টাকায় চলত বড় ছোয়ালের পড়াশোনাসহ চারজনের সংসার। বেটা আর নাইরে। এখন কিডা চালাবিনি সংসার।’
এদিকে নিহত সেলিমের বাড়িতে গেলে তাঁর স্ত্রী শোভা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘শনিবার বিকেলে ফোনে শেষ কথা হয়েছিল। বারবার বলছিল, ‘‘প্রচুর ধোঁয়া, নিশ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না। হয়তো আর বাঁচব না। বাবা, মা, মেয়েকে দেখে রাখিস।’’ এখন আমাদের দেখবে কে? তিন বছরের মেয়ে হুমাইরাকে নিয়ে কোথায় যাব?’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম জানান, পরিবার থেকে লিখিত আবেদন করলে সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ এলে তা দেওয়া হবে।