যশোরে বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজিত সমাবেশের দিন জেলা যুবলীগের একাংশও পাল্টা সমাবেশ করেছে। বিএনপি–যুবলীগের পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে শহরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শহরে মোতায়েন করা হয়েছিল অতিরিক্ত পুলিশ। গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে একই দিন শহরে দুই দলের পক্ষ থেকে সমাবেশের ডাক দেওয়া হচ্ছে। এতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিএনপির দলীয় কার্যালয় এবং শীর্ষ নেতাদের বাসায়ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসবের জন্য যুবলীগ-ছাত্রলীগকে দায়ী করেছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পূর্বনির্ধারিত আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি। এর ৪০০ গজ দূরেই আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের নিচে যশোরে বিএনপিকে রাজপথে নামতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সমাবেশ করে জেলা যুবলীগ। সড়কে সমাবেশ করায় রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দুটি দলই শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মিছিল করে জমায়েত হয় নিজ নিজ দলীয় কার্যালয়ের সামনে। সমাবেশে উভয় দলের বক্তারা একে অপরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেন। যুবলীগের সমাবেশে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা কর্মীদের হাতে লাঠি-স্টাম্প নিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায়।
অন্যদিকে বিএনপির সমাবেশও নেতা কর্মীদের লাঠি–বাঁশ হাতে মহড়া দিতে দেখা যায়। পরে পুলিশের একটি টহল টিম বিএনপির নেতা কর্মীদের থেকে এসব উদ্ধার করে পুলিশের গাড়িতে জমা রাখেন। সব মিলিয়ে আজকে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দলের খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম বলেন, ‘বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে হলেও ফ্যাসিবাদী শক্তিকে হটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব। বিএনপির নেতৃত্বে দেশব্যাপী সমগ্র জনগণ ঐক্যবদ্ধ। তখন এই কর্তৃত্ববাদী সরকার তাঁর অবৈধ ক্ষমতার মসনদে টিকিয়ে রাখতে জনগণের আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে দলীয় সন্ত্রাসী এবং তাদের অনুগত প্রশাসনকে লেলিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ দিন বদলের কথা বলে ক্ষমতায় এসে তাঁদের মনের বদল ঘটাতে পারেনি। যে কারণে তাঁরা প্রতিনিয়ত দেশের ভিন্ন মতকে দমন পীড়নসহ হত্যার মিশনে ব্যস্ত রয়েছে।’
জেলা বিএনপি ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত রোববার বিকেলে যশোর আদালত থেকে শহরের ঘোপ এলাকার বাড়িতে ফেরার পথে দড়াটানা মোড়ে অনিন্দ্য ইসলামের গাড়িতে ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর করেন যুবলীগের নেতা কর্মীরা। চালক দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে ঘোপ এলাকার একটি বাড়িতে ঢুকে পড়েন। এরপর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা–কর্মীরা মিছিল নিয়ে বাড়ির সামনে গিয়ে প্রধান ফটকের বাইরে থেকেও ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে।
পরে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে শহরের লালদীঘির পারে গিয়ে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান। এর আগের রাতে জেলার চার শীর্ষ নেতার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এতে শহরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ইকবাল হাসান মাহমুদ যশোরে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন। এর পরের দিন প্রেস ক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলনে জেলা যুবলীগের ব্যানারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামের ছেলে ও দলের খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলামসহ বিএনপির নেতা–কর্মীদের যশোরের রাজপথে নামতে না দেওয়ার ঘোষণা দেয় জেলা যুবলীগ।