ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের ত্রিশালে চিকনা মনোহর গ্রামের কৃষক তারা মিয়া। সারা বছরের প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ফসল নিয়ে হাজির হন নিকটস্থ বাজারে। উপযুক্ত মূল্য পেতে নিজের উৎপাদিত ফসল নিজেই বিক্রি করেন। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি সপ্তাহে এক দিন উপজেলা সদরের বাজারেও হাজির হন তাঁর উৎপাদিত ফসল নিয়ে। বরজ ও বিভিন্ন শাকসবজির পাশাপাশি এবার তারা মিয়া তাঁর ৩০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করেছেন। পেয়েছেন অভাবনীয় সফলতা। আশা করছেন এটুকু জমিতেই এবার তিন লক্ষাধিক টাকা আয় করবেন।
সরেজমিন দেখা যায়, তারা মিয়ার শিমখেতে থোকায় থোকায় ধরেছে দেশীয় শিম। শিমের ফুল, মুকুল আর সবুজ পাতায় মিলেমিশে সৌন্দর্যও ছড়াচ্ছে বেশ। তারা মিয়া পরিপক্ব শিমগুলো তুলে জমা করছেন খাঁচায়। তাঁর পুকুরপাড় ঘেঁষা ঢালু পতিত জমিতে সুতো ও বাঁশের তৈরি মাচার ওপর দুলছে শিমগাছের কচি ডগা। ডগার মধ্যে উঁকি দিচ্ছে শিমের লাল ফুল। সবুজ পাতার কচি ডগায় লাল ফুলে হাসছে কৃষক তারা মিয়ার স্বপ্ন।
বিভিন্ন সময়ে উৎপাদিত ফসল বিক্রির টাকায় চলে তাঁর সংসার। কলেজপড়ুয়া ছেলে ও স্কুলপড়ুয়া মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হলেও তিনি কখনো ছেলেমেয়েদের সেই অভাব বুঝতে দেন না। কৃষি কার্যালয়ের সহযোগিতা ও পরামর্শ পেলে ব্যয় কমিয়ে অধিক ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে সংসার খরচের চাপ কমাতে পারবেন জানিয়ে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তারা মিয়া।
তারা মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ছেলে-মেয়েরা সবাই পড়াশোনায় ভালো। আমার শত কষ্ট হলেও তারা যেন পড়াশোনা করে মানুষ হতে পারে বাবা হিসেবে সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এবার ৩০ শতাংশ জমিতে শিমগাছ লাগিয়েছি। ফলন আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫০-৬০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছি। আশা করছি এবার তিন লক্ষাধিক টাকার শিম বিক্রি করতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি সরকার থেকে কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হয়। আমি কখনো কৃষি অফিসে যাইনি, খোঁজ নিতে তারাও কেউ কখনো আসেনি। নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে যেটুকু পারি সেভাবে চাষ করেছি। তবে পরামর্শ ও সহযোগিতা পেলে কষ্ট কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হতো।’
স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. বোরহান উদ্দিন শিম চাষ দেখতে এসে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কৃষক তারা মিয়ার সবজির খেতে শিমের ব্যাপক ফলন হয়েছে জানতে পেরে দেখতে এসেছি। দেখে খুব আনন্দ লাগছে যে তার পাঁচ-ছয় কাঠা জমিতে প্রচুর শিম এসেছে। আমি এই ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার আওতায় নিয়ে আশার চেষ্টা করব।’
উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা এ জি এম গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ত্রিশালে বাণিজ্যিকভাবে তেমন শিম চাষ হয় না। শিম চাষে তারা মিয়ার সাফল্যকে আমরা স্বাগত জানাই। ভবিষ্যতে তারা মিয়ার মতো বহু তারা মিয়া সৃষ্টি হোক এবং শিম চাষে এগিয়ে আসুক আমরা এটা প্রত্যাশা করি। তারা মিয়ার মতো সব চাষিই যদি নিজের উৎপাদিত ফসল নিজেই বিক্রি করত, তবে সবার জন্য বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি পাওয়া নিশ্চিত হতো। এতে সরকার ও দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি লাভবান হতো।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কৃষক তারা মিয়ার বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। জানতে পেরেই ওই ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে খোঁজ নিতে পাঠিয়েছি। ওই কৃষক যেন বিভিন্নভাবে সহযোগিতা পান এবং পরবর্তীকালে তাঁর কৃষিকাজ করতে গিয়ে যেন কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে না হয়, সেই বিষয়টাও আমি দেখছি।’