৪ মাস ক্লাস করার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগে এক ভুয়া শিক্ষার্থীকে আটক হয়েছেন। গতকাল শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরের মাধ্যমে তাঁকে থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ভুয়া শিক্ষার্থীর দাবি, মাকে খুশি করতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অভিনয় করেছেন।
তাঁর নাম নাভিক রহমান। তিনি আইন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্লাস করছিলেন। পাশাপাশি, খেলাধুলা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপনসহ বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাভিক রহমান জানান, তাঁর মায়ের অনেক আশা ছিল, ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাননি। তাই মাকে খুশি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অভিনয় করেছেন এত দিন।
নাভিক রহমানের ফেসবুক আইডিতে দেখা গেছে, নিজেকে রাবি আইন বিভাগের ৪৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। প্রোফাইল পিকচারে আইন বিভাগ লেখা একটি টি-শার্ট পরিহিত ছবি রয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টে আইন বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার ছবিও পোস্ট করেছেন। তাঁর ফ্রেন্ডলিস্টেও আইন বিভাগের অনেকে যুক্ত রয়েছেন।
এই বিষয়ে আইন বিভাগের ৪১ ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহরুখ মাহমুদ বলেন, তাঁর ব্যাচমেটদের সন্দেহ হলে তাঁরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তখন বিষয়টি সামনে আসে। এমনকি তাঁর অভিভাবক হিসেবে যাঁদের ডেকেছিল, তাঁরাও ভুয়া। এরপর বিভাগের সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে গিয়ে নাভিক ও তাঁর ভুয়া অভিভাবকদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। গত চার মাসে বিভাগের সবকিছুতে তিনি উপস্থিত ছিলেন—একদম প্রফেশনাল স্পাই এজেন্টের মতো। তিনি কোনো গুপ্তচর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত কি না তদন্ত করা হোক।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সতর্ক থাকা দরকার, আমাদের বিভাগের সিকিউরিটি নিয়ে। একজন চার মাস ধরে ক্লাস করেছে, প্রতিটা প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে, অথচ আমাদের বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইডেনটিফাই করতে পারেনি—এটা চরম ব্যর্থতা।’
ইমতিয়াজ নাহিদ নামে ৪২ ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ওই ব্যাচে এর আগেও একটা ফ্রড ধরা পড়েছিল। তার নাম ছিল আনিকা। সবাই মিলে তাকে ধরার চেষ্টা করলে পালিয়ে যায়।’
আইন বিভাগের ৪৩ ব্যাচের (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ) শ্রেণি প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসান মেহেদী বলেন, ‘আমাদের ক্লাস শুরু হওয়ার প্রথম দিকে এক মাসের মতো রোল কল করা হতো না। ওই সময় নাভিককে নিয়মিত ক্লাস করতে দেখেছি। পরে রোল কল শুরু হলে তাকে খুব একটা নিয়মিত দেখা যেত না। তবে বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে অংশগ্রহণ করত নিয়মিত। আমাদের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায় তাকে উপস্থিত হতে না দেখে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারি, তার নাম আমাদের শিক্ষার্থীদের তালিকায় নেই।’
এই বিষয়ে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সাঈদা আঞ্জু বলেন, ‘তাকে বেশ রাতে আটক করা হয়েছে। আমি সশরীরে উপস্থিত হতে পারিনি ওই সময়। প্রক্টর স্যারের সঙ্গে শুধু একটু কথা হয়েছিল। আজ প্রক্টর স্যারের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলার পরে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব। এটুকু জেনেছি, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রই না। তাই, সে আদৌ ক্লাস করেছে কি না, সেটা সংশ্লিষ্ট ব্যাচের শিক্ষার্থীরাই ভালো বলতে পারবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘ছেলেটি স্বীকার করেছে যে তার মায়ের অনেক আশা ছিল, তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ পায়নি। তাই মাকে খুশি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অভিনয় করেছে এত দিন। তাকে থানায় হস্তান্তর করেছি। পুলিশ অধিকতর তদন্ত করে দেখবে বিষয়টি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের হাতে সোপর্দ করেছে। পরে আমরা প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে আজ দুপুরের দিকে আদালতে চালান দিয়েছি। সেখান থেকে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।’