রাজশাহীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ডে হামলা চালিয়েছেন বাসশ্রমিকেরা। আজ মঙ্গলবার সকালে এই হামলা চালানো হয়। এ সময় অন্তত ৭০টি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে অটোরিকশাচালকদের দাবি, প্রায় ৯০টি গাড়ি ভাঙচুর এবং যাত্রী-চালকসহ ৪০ জনকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে।
অটোরিকশা স্ট্যান্ডটি রাজশাহী নগরের রেলগেট এলাকায়। এর আগে গতকাল সোমবার সকালে জেলার তানোর উপজেলা সদরের সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকেরা বাসের ছয়জন চালক, চালকের সহকারী ও কন্ডাক্টরকে পিটিয়ে আহত করেন। এর জেরে আজ দুপুরে রাজশাহী থেকে সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখনই বাসশ্রমিকেরা শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তাঁরা রেলগেটে অটোরিকশা স্ট্যান্ডের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাঁদের শান্ত করে। আজ দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী থেকে কোনো বাস ছাড়ছে না।
এদিকে আজ সকালে বাস শ্রমিকেরা হাতুড়িসহ লাঠিসোঁটা নিয়ে রেলগেটে একের পর এক সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করতে থাকেন। এ সময় বাধা দিতে গেলে চালক ও যাত্রীদের মারধর করা হয়। পরে বাস শ্রমিকেরা চলে গেলে পুলিশ সেখানে যায়।
রাজশাহী সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রায় ৯০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। পিটিয়ে আহত করা হয়েছে কমপক্ষে ৪০ জনকে। তাঁদের বেশির ভাগই চালক, কয়েকজন যাত্রী আছেন। তাঁদের মধ্যে একজন গর্ভবতী নারী রয়েছেন।’
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আহত ব্যক্তিরা বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছেন। পুলিশ এসেছে, সবই দেখেছে। আমরা মামলা করব। এখন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আমাদের ডেকেছেন। আমরা কথা বলতে যাচ্ছি।’
রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিক আলী পাখির ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের নেতা হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা পুলিশ কমিশনারের কাছে এসেছি। কথা বলছি। সাংবাদিকদের সঙ্গে পরে কথা বলব।’
নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ বলেন, ‘আমরা এসে ভাঙচুর করা ৩২টি গাড়ি পেয়েছি। অন্য গাড়িগুলো চলে গেছে। ভাঙচুর করা গাড়ির সংখ্যা ৭০টি হতে পারে। সব গাড়ির কাচ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এরপর কিছু গাড়ি উল্টে ফেলা হয়।’
ওসি বলেন, ‘যাত্রী ও চালক মিলিয়ে ১২ জনের মতো আহত হয়ে থাকতে পারেন। আমরা সিএনজিচালকদের মামলা করতে বলেছি। তারা মামলা দিলে আমরা নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
রাজশাহীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ও বাস শ্রমিকদের এই দ্বন্দ্ব বেশ পুরোনো। বাস শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন ধরেই অটোরিকশা স্ট্যান্ড শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়ার দাবি করছেন। প্রায়ই তাদের মধ্যে ছোটখাটো সংঘাত হয়। আগেও বাস চালক ও হেলপাররা তানোর উপজেলা সদরে মারধরের শিকার হয়েছেন। তখনো বাসচালকেরা গাড়ি বন্ধ রেখে এর প্রতিবাদ করেছেন।
এ বিষয়ে তানোর থানার ওসি মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাস শ্রমিক ও অটোরিকশাচালকদের সমস্যা পুরোনো। এরা শহরে গেলে তাদের সিএনজি আটকানো হয়। এরা তখন তানোরে বাসের চালক-হেলপারদের দাপট দেখায়। এই সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত।’
ওসি আরও বলেন, গতকাল ছয়জন বাস শ্রমিককে মারধরের ঘটনায় রাতে থানায় মামলা করা হয়েছে। তাতে আসামি হিসেবে ১৮ জন সিএনজিচালকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও আসামি আছে। মামলার পর এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’