আলু সংরক্ষণে হিমাগারভাড়া ‘অন্যায্যভাবে’ বাড়ানোর প্রতিবাদ জানিয়ে পাঁচ দফা দাবিতে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। এ সময় তাঁরা মহাসড়কে আলু ফেলে হিমাগার মালিক সমিতির ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শহীদ মিনারের সামনে আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির ব্যানারে প্রথমে মানববন্ধন হয়। পরে তাঁরা পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে আলু ফেলে অবরোধ করেন। এ সময় আলুচাষিদের আলু ন্যায্যমূল্য ও দাবি পূরণে রাস্তায় গড়াগড়ি দিতে দেখা যায়। পরে বীরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে এলাহী ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল গফুর এসে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।
মানববন্ধনে আলুচাষিরা জানান, গত কয়েক বছর ধরে তাঁরা আলু সংরক্ষণে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। ২০২১ ও ২০২২ সালে দিনাজপুরের হিমাগার মালিকপক্ষ হিমাগারে আলুর বস্তা সংরক্ষণে একচেটিয়া মুনাফা করেছেন। এতে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পুঁজি হারিয়েছেন। তাই, গত দুই বছরে কৃষকেরা আলু চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। এতে দেশে আলুর ঘাটতি দেখা দেয় এবং আলুর দাম অনেক বেড়ে ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে যায়। ঘাটতি পূরণে ভারত থেকে আলু আমদানি করতে হয়।
আলুচাষি ও বীরগঞ্জ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক ও সাধারণ সম্পাদক হরসুন্দর বর্মণ বলেন, চলতি মৌসুমে আলু চাষে বেশি খরচ পড়েছে। আলুর আবাদ বেশি হওয়ায় হিমাগার মালিকেরা দুরভিসন্ধি করছেন। এর প্রতিবাদে গত ৩ ফেব্রুয়ারি তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু কোনো সমাধান না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নেমেছেন।
বীরগঞ্জের ইউএনও ফজলে এলাহী আজকের পত্রিকাকে বলেন, হিমাগার মালিক সমিতি যে দাম বাড়িয়েছে, তা অন্যায্য। বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। জেলা প্রশাসক বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কনফারেন্সে উপস্থাপন করবেন। জাতীয়ভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে সমাধানেরও চেষ্টা করা হবে।
আলুচাষিদের দাবিগুলো হলো হিমাগারের প্রতি বস্তা আলু সংরক্ষণে ন্যায্য ভাড়া নির্ধারণ, হয়রানি বন্ধ, আলু শুকানোর জন্য শেড চার্জ ফ্রি বা নামমাত্র করা, আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগার মালিকেরা যে ঋণ দেন, তা ব্যাংকের সুদের হারের চেয়ে ২ শতাংশের বেশি নির্ধারণ না করা এবং সংরক্ষিত আলু পচে গেলে বা হিমাগার কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে নষ্ট হলে তৎকালীন বাজার অনুযায়ী সংরক্ষণকারীকে মূল্য পরিশোধ করা।
মানববন্ধনে কৃষকদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ধলু। আরও বক্তব্য দেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আনসারুল ইসলাম, কৃষক শফিকুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশে সমস্যা নিরসনে সাত দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়।