হোম > সারা দেশ > রংপুর

কেমন আছে অস্ত্রোপচারে জোড়া পেট আলাদা করা মণি-মুক্তা

এন আই মিলন, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) 

‘জন্মের পরপরই তোলা ছবি দেখে বুঝেছি, আমরা দুই বোন স্বাভাবিক ছিলাম না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের বদৌলতে আজ সুস্থ জীবন যাপন করছি। আমাদের ইচ্ছা চিকিৎসক হয়ে অসুস্থ ও অসহায় মানুষের সেবা করব।’ এসব কথা বলে দিনাজপুরে পেটে জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম নেওয়া মলি পাল ও মুক্তা পাল।

২০০৯ সালের ২২ আগস্ট দিনাজপুরের পার্বতীপুর ল্যাম্ব হাসপাতালে কৃষ্ণা রানী পাল নামের এক নারীর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম হয় যমজ মেয়ে মণি-মুক্তার। পেট জোড়া লাগা অবস্থায় তাদের জন্ম হয়েছিল। মণি-মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। 

জয় প্রকাশ পাল কৃষিকাজ করেন। গ্রামে তাঁর ছোট একটি ওষুধের দোকান রয়েছে। এসবের থেকে স্বল্প আয়ে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলের পড়াশোনা ও ভরণপোষণ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। 

ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মণি-মুক্তাকে অস্ত্রোপচারে আলাদা করার মাধ্যমে বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইতিহাস সৃষ্টি হয়। দেশে প্রথম জোড়া লাগানো শিশুর সফলভাবে আলাদা করা হয়। এই সফল অস্ত্রোপচার করে প্রশংসিত হন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এ আর খান। 

মনি-মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল বলেন, ‘২০০৯ সালের ২২ আগস্ট পার্বতীপুর ল্যাম্ব হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে পেটে জোড়া লাগানো অবস্থায় তারা দুনিয়ায় আসে। ফলে দুশ্চিন্তার অন্তঃ ছিল না আমাদের। কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। অনেকের অনেক কথা শুনতে হয়েছে আমাদেরকে। ওই সময় গ্রামের মানুষ এটাকে অভিশপ্ত জীবনের ফসল বলে প্রচার করতে থাকে। সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কারে প্রায় একঘরে হয়ে পড়ি। বিভিন্ন অপবাদে গ্রামে আসেনি। মনি-মুক্তাকে নিয়ে তুলি পার্বতীপুরের ভবানীপুরে তাদের নানার বাড়িতে।’ 

মনি-মুক্তার মা কৃষ্ণা রাণী পাল বলেন, ‘হতাশার মাঝে স্বপ্ন দেখি মনি-মুক্তাকে নিয়ে। বিভিন্ন চিকিৎসকের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকি তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য। রংপুরের চিকিৎসকেরা ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে যমজ বোনকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথক করার পরামর্শ দেন। তাঁদের পরামর্শে ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকার শিশু হাসপাতালে মনি-মুক্তাকে ভর্তি করি। ৮ ফেব্রুয়ারি শিশু বিশেষজ্ঞ এ আর খান সফল অপারেশন করে মনি-মুক্তাকে আলাদা করেন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে প্রথমে ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি পার্বতীপুরে বাবার বাড়িতে আসি। কিছুদিন সেখানে থাকার পর নিজ গ্রাম বীরগঞ্জ উপজেলার পালপাড়ায় মনি-মুক্তাকে নিয়ে আসি।’ 

মনি-মুক্তা বলে, ‘আমরা গরিব অসুস্থ, অসহায় মানুষের সেবা করতে চাই। আমাদের গর্ব হয় যে আমরা বাংলাদেশে প্রথম সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথক হয়েছি। চিকিৎসক এ আর খানসহ যেসব চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা আমাদের এই পর্যন্ত আসতে সহায়তা করেছে তাঁদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। সবার কাছে কামনা করি মানুষের মতো মানুষ হতে পারি, যাতে চিকিৎসক হতে পারি।’ 

ঝাড়বাড়ী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা আজকের পত্রিকা’কে জানান, মনি ও মুক্তা ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তারা শান্ত, ভদ্র ও নম্র। পড়ালেখায় তারা অনেক ভালো, পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী। তারা চিকিৎসক হতে চায়, সেবা করতে চায় দুস্থ-অসহায় মানুষের। 

মনি-মুক্তার বড় ভাই সজল পাল বলেন, ‘আগামীকাল ১৫ তম জন্মদিন উপলক্ষে ঘরোয়াভাবে কেক কেটে দুই বোনের জন্মদিন পালন করব আমরা। সন্ধ্যায় তাদের মঙ্গল কামনা করে পূজা ও প্রসাদ বিতরণ করা হবে।’

আরও খবর পড়ুন:

বাক্সবন্দী লাখ লাখ টাকার যন্ত্র

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ধাক্কা খেয়েছে জনগণের প্রত্যাশা: নুর

লালমনিরহাটে ট্রেনে কাটা পড়ে শিশুর মৃত্যু

মানুষের কষ্টের আগুনে পেট্রল ঢেলেছে সরকার: নুরুল হক

দেড় কিলোমিটার দূরে পুলিশের ফায়ারিং রিহার্সাল, বাড়িতে গুলিবিদ্ধ কিশোরী

ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির মহোৎসব

গাইবান্ধায় দুই পক্ষের বিবাদ মেটাতে গিয়ে প্রাণ গেল ইউপি সদস্যের

পঞ্চগড়ের মানুষ চাইলে সারজিস কিংবা কোনো তরুণ সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবেন

মিজানুর রহমান আজহারী লালমনিরহাট যাচ্ছেন শনিবার

শুধু একটি ভোটের জন্য এই গণ-অভ্যুত্থান হয়নি: নুরুল হক নুর

সেকশন