দেশের উচ্চশিক্ষা বিস্তারে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনন্য ভূমিকা পালন করছে। অবদান রাখছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান তৈরিতেও। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ধীরে ধীরে উচ্চশিক্ষার চাহিদা বাড়তে শুরু করে। এর চাপ পড়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর। ফলে বিষয়, আসনস্বল্পতাসহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। এসব দিক বিবেচনা করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯২ (১৯৯৮-এ সংশোধিত) পাস করা হয়। তিন দশকের ব্যবধানে বর্তমানে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৩। আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বাড়ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা
মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার ফলে এরই মধ্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পাশাপাশি সেশনজট ও রাজনৈতিক বৈরী পরিবেশ না থাকায় আগ্রহ বাড়ছে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের। ইউজিসির ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, চালু থাকা ৯৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩ লাখ ১০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেশীয় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীরাও পড়ছেন। ইউজিসির ২০২১ সালের তথ্যমতে, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৬০৪ জন। প্রতিবছর এই সংখ্যা বাড়ছে।
পড়ানো হচ্ছে সময়োপযোগী বিষয়
যতই দিন যাচ্ছে, পৃথিবীর অর্থনীতি এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া ততই বিচিত্র ও বহুমুখী হয়ে পড়ছে। প্রথাগত বিষয়গুলো তো আছেই; সেই সঙ্গে বিশ্ববাজারে দরকার হয়ে পড়ছে নিত্যনতুন জ্ঞানকাঠামোর শিক্ষার্থীদের। তাই পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে এবং বিশ্ববাজারে যেসব বিষয়ের চাহিদা আছে, সেগুলো পড়ানো হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। দেশি ও বিদেশি বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা সব সময় বিবেচনায় রেখে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি তৈরি করা হয়।
বৈশ্বিক মান বজায় রাখছে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম সময়োপযোগী হিসেবে তৈরি, পাঠদানের কৌশল, উপস্থাপন পদ্ধতি বেশ আধুনিক, যা শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক ও কার্যকর। অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষকেরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করেন। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় কম্পিউটার ও বিভিন্ন ল্যাব সুবিধা রয়েছে। ফলে গুণগত মানসহ বৈশ্বিক মান বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
অর্থনীতিতে অবদান
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হয়। বর্তমানে ৯৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে। দেশের শিক্ষাপ্রেমী উদ্যোক্তারা অর্থ ব্যয় করে এসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। ফলে সরকারের এই খাতে অর্থ ব্যয় করতে হয়নি। দেশে উচ্চশিক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ থাকায় বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। অন্যদিকে এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে আগ্রহী বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। এতে একদিকে যেমন বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব বাড়ছে। এসব অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।
গবেষণা ও প্রকাশনা
গবেষণা খাতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগের তুলনায় গবেষণার মান বেড়েছে। ইউজিসির ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গবেষণায় অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে দেশের প্রথম ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ছয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সামনের দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা রয়েছে। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দরিদ্র, মেধাবী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে শিক্ষা গ্রহণের পথ সুগম করে দিচ্ছে। সহশিক্ষা কার্যক্রম উন্মুক্ত থাকায় শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছেন। দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা, গবেষণা, সহশিক্ষা কার্যক্রমে নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করে চলেছে।
লেখক: আব্দুর রাজ্জাক খান, সহ–সম্পাদক , আজকের পত্রিকা